মোঃ সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি
ভোলার উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং স্থানীয় কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে লবণ সহিষ্ণু সবজি চাষকে উৎসাহিত করতে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে লবণ সহিষ্ণু শাকসবজির চারা বিতরণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর আরএইচএল প্রকল্পের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস) এই কর্মসূচি আয়োজন করে। ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের পরীর হাট এবং বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়নে এই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে দুই ইউনিয়নের ৪০ জন উপকারভোগী অংশ নেন এবং তাদের মাঝে বিনামূল্যে লবণ সহিষ্ণু শাকসবজির চারা, বীজ এবং সবজি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বেড়া তৈরির নেট বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাসান ওয়ারিসুল কবীর। তিনি প্রশিক্ষণের গুরুত্ব এবং লবণ সহিষ্ণু ফসল চাষের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন জিজেইউএস-এর সহকারী পরিচালক ও প্রকল্প সমন্বয়কারী আনিসুর রহমান। এছাড়াও জিজেইউএস-এর কারিগরি কর্মকর্তা এস. এম. সাকিবুল ইসলাম ও সহকারী কারিগরি কর্মকর্তারা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
প্রশিক্ষণে বিশেষজ্ঞরা জানান, উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা জলবায়ু পরিবর্তন এবং মাটির লবণাক্ততার কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য লবণ সহিষ্ণু ফসল চাষ একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। তারা আরও বলেন, বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠী নিজেদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাবে।
উপস্থিত কৃষকরা এই উদ্যোগে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং জানান, বিনামূল্যে প্রাপ্ত চারা ও উপকরণ তারা যত্নসহকারে পরিচর্যা করবেন। এতে তাদের পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনের পরিকল্পনা করেছেন।
জিজেইউএস-এর সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, আরএইচএল প্রকল্পের আওতায় ২০টি ব্যাচে মোট ৪০০ জন উপকারভোগীকে লবণ সহিষ্ণু শাকসবজির চারা, বীজ এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হবে। বিতরণকৃত চারাগুলোর মধ্যে বেগুন, ফুলকপি, টমেটো, মূলা, লালশাক, কলমি শাক এবং ধনিয়ার বীজ ও চারা অন্তর্ভুক্ত আছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে এবং এটি উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকদের জন্য একটি টেকসই সমাধান হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগটি শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নয়, বরং উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।