যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো লেবার পার্টি থেকে জয় পেয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক। ওই একই দেশে বিভিন্ন অপরাধে দণ্ডিত হয়ে পলাতক আছেন জিয়াউর রহমানের জৈষ্ঠ্য পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। টিউলিপ যেমন বাংলাদেশের গর্ব, অপরদিকে তারেক রহমান দেশের জন্য এক কলঙ্ক হয়ে আছেন ব্রিটিশ ভূমিতে।
শুধু টিউলিপই নয়, বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য দৌহিত্ররাই বাংলাদেশকে গর্বিত করছেন বিশ্বের বুকে বিভিন্নভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ২৭ জুলাই ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জন্ম নেন। তার বাবা এম এ ওয়াজেদ মিয়া, একজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয় উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষিত ও জনপ্রিয় এক তরুণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
১৯৭৫ সালে তার নানা শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে হত্যার সময় ভাগ্যক্রমে মায়ের সঙ্গে জার্মানিতে থাকায় রক্ষা পান তিনি। লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এ্যট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বাস করছেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী মরহুম ড. ওয়াজেদ মিয়ার সুযোগ্য কণ্যা সায়েমা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জননী। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরি হলেও রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে সায়মা ওয়াজেদ নিজেকে ভিন্ন পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন। সারাবিশ্বে আজ প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ের প্রতীকী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার এই যোগ্য উত্তরসূরি।
বর্তমানে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী, ২০০২ সালে ক্লিনিকাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর লাভ করেন বিশেষজ্ঞ ডিগ্রী। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ের ওপর তাঁর গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমী অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন তিনি। খুব অল্প সময়েরে মধ্যেই শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল । ২০১৪ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করে। মনস্তত্ববিদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। ২০১৩ সালে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলেও অন্তর্ভুক্ত হন তিনি।
টিউলিপ সিদ্দিক শেখ রেহানার কন্যা। যিনি ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্নে বসবাস করছেন। ওই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তিনি ২০১৫ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো বিজয়ী হন।
২০১৫ সালে এমপি হওয়ার আগে তিনি রিজেন্ট পার্কের কাউন্সিলর এবং ২০১০ সাল থেকে চার বছর ক্যামডেন কাউন্সিলের কালচার অ্যান্ড কমিউনিটির সদস্য ছিলেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর টিউলিপ লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের ছায়া মন্ত্রিসভায় নিযুক্ত হন। পরে তিনি পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিলের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণপূর্বক লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো বিপুল ভোটে বিজয়ী হন টিউলিপ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর আরেক দৌহিত্র শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এ ক্ষেত্রে ‘ইয়াংবাংলা’, ‘জয়বাংলা কনসার্ট’ এবং ‘মুজিব’ সিরিজের কাজের কথা প্রথমেই মনে আসবে। তিনি আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর ট্রাস্টি। সিআরআই’র হেড অব স্ট্রাটেজি অ্যান্ড প্রোগ্রাম হিসেবে কাজ করছেন যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করা ববি।
তার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও পরামর্শে পরিচালিত ‘সিআরআই’ ও ‘ইয়াংবাংলা’র ব্যানারে তিনি নতুন জীবনের সন্ধান দিচ্ছেন যুবসমাজকে।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের শিক্ষার প্রতি ঐতিহ্যবাহী এই কার্যক্রমের বিপরীতে বাংলাদেশের জন্য দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের কলঙ্ক নিয়ে এসছেন জিয়াউর রহমানের দুই পুত্র তারেক-কোকো এবং স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোট সরকারের আমলকে। সেই সময় ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করা টাকার ভাগ নিতেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো’র দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে খুব বাজেভাবে পরিচিতি পেতে হয়েছিল। দেশে ব্যাপকভাবে দুর্নীতির কারণে টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স (সিপিআই) এ বাংলাদেশে পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বের মধ্যে প্রথম ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতিকে বিএনপির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং সার্বিক সমর্থন দেওয়ার খবর প্রকাশিত হতে থাকলে খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়।
বিএনপি শাসনামলে হওয়া নাইকো দুর্নীতির মাধ্যমে একাধিক মন্ত্রী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক রহমান এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও শীর্ষ রাজনীতিবিদরা নগদ অর্থ, দামী এসইউভি গাড়ি, বিদেশ সফর এবং দামী উপহার নিয়েছিল। আর এ অর্থ প্রদানের মধ্যস্থতা করেন তারেকের প্রভাবশালী বন্ধু মামুন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে নাইকো অর্থ প্রদানের জন্য যে জটিল পন্থা অনুসরণ করেছে তা আরসিএমপি এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তদন্তে উঠে আসে।
নাইকো দুর্নীতি ইস্যুতে বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অফ ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটস (আইসিএসআইডি) গত ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি সালিশি মামলার সাম্প্রতিক শুনানিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহারের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের লক্ষ্য তারেক সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঘুষের বিনিময়ে নাইকোকে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে।
শুধু দুর্নীতি করেই তারেক রহমান তার কাজ শেষ করেননি। দুর্নীতির পাশাপাশি এই অর্থ তিনি জঙ্গি কার্যক্রমে বিনিয়োগও করেছিলেন। কানাডার সাংবাদিক ডেভিড মন্টেরো তার বই ‘কিকব্যাক’-এ তারেক রহমানের দুর্নীতি নিয়ে লিখেছেন। টেলটিক প্রতিষ্ঠার সময় সিমেনস কোম্পানির থেকে তারেক রহমান ও তার ভাই যে ঘুষের টাকা নিয়েছিলেন সে বিষয়ে তথ্য প্রমাণসহ বর্ণনা করা আছে এই বইয়ে। এখানেই তিনি জানান, সিমেনস থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে পাওয়া অর্থ জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য বিনিয়োগ করেছিলেন তারেক রহমান। তিনি বাংলাদেশ তথা এই অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রমের মাধ্যমে এক অস্থিরতা তৈরি করে তার দুর্নীতি কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন এবং এভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন বলে জানান এই লেখক। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফার জন্য বাংলাদেশে যেই ১০ ট্রাক অস্ত্র পরিবহন করে নিয়ে আসা হয়, সেখানেও তারেক রহমানের সরাসরি জড়িত থাকার কথা জানিয়েছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিআইএ’র সাবেক উপপ্রধান মেজর জেনারেল গগনজিৎ সিং। তিনি আরও জানান, এই অস্ত্র শুধু ভারতের জন্য নয়, এর একটি অংশ জামায়াত তথা বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন জঙ্গিদের জন্যও ছিলো।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দেশের সকল জেলায় একযোগে জেএমবির বোমা হামলা থেকে শুরু করে বাংলা ভাই, জেএমবি সহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেন তারেক রহমান। সেই সঙ্গে তারেক রহমান ও বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ২০১৩-১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সড়কে চালানো হত্যাযজ্ঞের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তৃতীয় শ্রেণীর সন্ত্রাসী দলের খেতাব অর্জন করে জিয়ার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি।
দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, খুন থেকে শুরু করে এমন কোন মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন ও পলাতক আসামী তারেক রহমান। সেই সঙ্গে এই ধরনের মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের অংশীদার ছিলেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা। আর এ কারণেই ক্ষমতার বাহিরে থেকেও এই গোষ্ঠীটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিজেদের নেতা হিসেবে তারেক রহমানকে নিয়েই চলছে বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা। বর্তমানে লন্ডনে তিনি আশ্রয় প্রার্থণা করে অবস্থান করছেন শরণার্থী হিসেবে। একই দেশে বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন চতুর্থবারের মতো ব্রিটিশ এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।