জাতিসংঘ স্বীকৃত শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রথম পদযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক শান্তি মিশনে যোগদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ জন চৌকস অফিসার প্রথম জাতিসংঘের পতাকাতলে একতাবদ্ধ হয়। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া শান্তি মিশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী বসনিয়ার শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। এ পর্যন্ত ৪৩ টি দেশে বা অবস্থানে জাতিসংঘের ৬৩ টি শান্তি মিশনে বাংলাদেশের প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৬ জন শান্তিরক্ষী অংশগ্রহণ করেছে।
এর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮৪ জন। বর্তমানে মোট ৬ টি দেশে সর্বমোট ৬ টি মিশনে ৪ হাজার ৭০ জন সেনা সদস্য নিয়োজিত আছেন। নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশসহ মোট শান্তিরক্ষীর সংখ্যা বর্তমানে ৬ হাজার ৯২ জন। বর্তমানে যে দেশগুলোতে বা অবস্থানগুলোতে শান্তিমিশন চলছে, সে দেশগুলো হলো- সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মালি, সাউথ সুদান, লেবানন, ডিআর কঙ্গো, ওয়েস্টার্ন সাহারা, লেবানন ও সুদানের আবেই। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ পর্যন্ত ১৬৬ জন বাংলাদেশি বীর সেনা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং ২৩৯ জন সদস্য পঙ্গুত্ব বরন করেছেন। বীরত্বের জন্য এখন পর্যন্ত বহু বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড’ পদকে ভূষিত হয়েছেন।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর এতো এতো সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিদেশি মোড়লদের অর্থে আমাদের বীর সেনাদের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরেই চক্রান্ত করে যাচ্ছেন বিতর্কিত হলুদ সাংবাদিক জিল্লুর, আরাফাত এবং ভুয়া পোর্টাল খ্যাত নেত্রনিউজের কুশীলব তাসনিম খলিলরা। গত ২১ মে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে বা ডিডব্লিউ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র্যাব ফোর্সেস নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদির একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। র্যাব কোনো নিয়মিত বাহিনী না হওয়া সত্ত্বেও প্রকাশিত ভিডিওতে র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলা হয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে বাংলাদেশের সৈন্য পাঠানো বন্ধের অপতৎপরতার অংশ হিসেবেই এই ভুয়া ডকুমেন্টারিটি প্রকাশ করেছিলো চক্রটি। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ থেকে সেনা না নেওয়ার ষড়যন্ত্র অনেক আগেই শুরু হয়েছে।
কিন্তু এসব ষড়যন্ত্রকে পাত্তা না দিয়ে আবারও বাংলাদেশের কাছে শান্তিরক্ষী সেনা চেয়ে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর পিস অপারেশন্স জ্যঁ পিয়েরে লাখোয়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং বাংলাদেশ থেকে আরও শান্তিরক্ষী প্রেরণের অনুরোধ জানিয়েছেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠানে এ অনুরোধ জানানো হয়। ‘শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অভিনব কৌশল ও সম্ভাব্য সংঘাতের ক্ষেত্র’ শীর্ষক এই সম্মেলনে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গাম্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদৌলে সানিয়াং, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর পিস অপারেশন্স জ্যঁ পিয়েরে লাখোয়া এবং আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর অপারেশনাল সাপোর্ট অতুল খারের সঙ্গে তিনটি পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে গত ২৬-২৭ জুন দুই দিনব্যাপী জাতিসংঘ পুলিশ প্রধানদের চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। আর সেখানেই বাংলাদেশকে অনুরোধ জানানো হয় জাতিসংঘের মিশনে আরও শান্তিরক্ষী সেনা প্রেরণ করতে।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্র জিল্লুর রহমানের সিজিএসকে ফান্ডিং করছে তথাকথিত গণতন্ত্র বিকাশের কথা বলে। আর তাসনিম খলিলের নেত্রনিউজকে ফান্ডিং করছে আইনি সহায়তা ও তথাকথিত মানবাধিকারের কথা বলে। এর আগেও ডয়েচে ভেলের মাধ্যমে এই চক্রটি বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে একই রকম একটি ভিত্তিহীন ও গুজব নির্ভর ভিডিওচিত্র প্রকাশ করেছিল। কিন্তু জাতিসংঘ সেটি আমলে না নেওয়ায় আবারও একই ধরনের ভুয়া ভিডিওচিত্র বানানো হয়।
বাংলাদেশিদের দিয়ে পরিচালিত যেসব সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাকা পায় তাদের মধ্যে অন্যতম নেত্রনিউজ বা তাসনিম খলিলরা। এই টাকা দেয় দেশটির ন্যাশনাল এনডাউমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি বা এনইডি। এই এনইডিকে বলা হয় আধুনিক সিআইএ। এদের সঙ্গে অপপ্রচারে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশে মার্কিনপন্থী সাংবাদিক জিল্লুর রহমান । বিদেশি প্রভুদের মদদপুষ্ট এই চক্রটির সম্মিলিত ষড়যন্ত্রকে রুখে দিয়ে বাংলাদেশের সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় গৌরবময় ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। অপশক্তির ঘৃণ্য চক্রান্ত এভাবেই বারবার পরাজিত হয়।