ঢাকা বুলেটিন ডিজিটাল ডেস্ক
বিএনপির রাজনীতিতে খালেদা জিয়া এক বিগত অধ্যায়ের নাম। সমুদ্রসম দুর্নীতি ও নানাবিধ অপরাধের দায়ে আদালতের সাজাভুক্ত হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কর্মীরা খালেদাকে নিয়ে আলাপও করতে চান না। রাজনীতিতে তাই তার গুরুত্ব ফুরিয়েছে বহুদিন আগে। শারীরিক অবস্থাও অনুকূলে নয়। এরইমধ্যে ফাঁস হলো খালেদা জিয়াকে নিয়ে দলের ভেতরে এক ষড়যন্ত্রের খবর। ধ্বজভঙ্গ বিএনপিকে চাঙ্গা করতে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে কমিটি বাণিজ্য হয়ে গেল ক'দিন আগে। ছক কষা হলো নতুন আন্দোলনের। আর সেজন্য খালেদা জিয়াকে বলির পাঁঠা বানানোর নির্দেশ আসে লন্ডন থেকে। রাজনীতিতে আনফিট খালেদা জিয়াকে ব্যবহার করে জনগণের সহানুভূতি আদায়, দেশজুড়ে বিক্ষোভ সৃষ্টি, দেশের বাইরে কাভারেজ পাওয়াই ছিল পুত্র তারেক রহমানের লক্ষ্য।
শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। বিএনপির ব্যবসায়ী নেতার মালিকানাধীন পাঁচতারকা মানের ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন। অথচ তাকে সে রাতে ইউনাইটেডে না নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এভারকেয়ার অবশ্যই সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত হাসপাতাল। নিজস্ব আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ব্যবস্থা রয়েছে তাদের। তবুও অদ্ভূত কারণে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসক সংগঠন ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ইউনাইটেডে ফোন করে রোগির পরিচয় না দিয়ে তাদের অ্যাম্বুলেন্স চাইলেন। এমনকি তাদের কাছে অ্যাট্রোপিন ও অ্যাড্রিনালিন ইনজেকশনও চাওয়া হয়। অবাক করা ব্যাপার, ইনজেকশনগুলো এভারকেয়ারেও ছিল। কিন্তু কেন খালেদা জিয়ার বাসভবনের নিকটবর্তী ইউনাইটেডে না নিয়ে দূরবর্তী এভারকেয়ারে নিতে হলো খালেদা জিয়াকে, কার নির্দেশে হাসপাতাল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন ডা. জাহিদ, এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি।
রোগির পরিচয় না জানানোয় স্বভাবতই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো সাধারণ রোগির জন্য চাওয়া হয়েছে ভেবেছিল। ভিআইপি রোগি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় প্রশ্ন ছাড়াই সব ব্যবস্থা করত। কিন্তু ইউনাইটেডের অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ারে রোগি পাঠানোর কথায় স্বভাবতই তারা বিষয়টি ভিন্নভাবে নেয়। শত হলেও বেসরকারি পাঁচতারকা হাসপাতাল মানেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রোগি ইউনাইটেডে ভর্তি হবে না কিন্তু তাদেরই অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রতিদ্বন্দ্বী এভারকেয়ারে ভর্তি করা হবে জেনেও ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে পারবে জানায়। কিন্তু ডা. জাহিদ কোনো নির্দেশনা না দিয়ে ফোন রেখে দেন। পরবর্তীতে বিএনপির নেতারা দাবি করেন ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্স ও ইনজেকশন দেয়নি সরকারের নির্দেশে। এরই প্রেক্ষিতে সংবাদমাধ্যমগুলো ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক জানান সেবা চেয়ে ফোন করা হলেও তারা রোগির পরিচয় জানতেন না। তবুও তারা অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত করেন, কিন্তু ডা. জাহিদ আর অ্যাম্বুলেন্স নেননি।
সৌভাগ্যক্রমে সে রাতে খালেদা জিয়ার বড় ধরনের বিপদ ঘটেনি। রাত ২টায় এই অ্যাম্বুলেন্স নাটক শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ইউটিউবারদের উপস্থিতি বাড়ায় কয়েক ঘণ্টা দেরি করে ভোরবেলায় এভারকেয়ারে নিয়ে যাওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। তাদের এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাটকের কারণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুও ঘটতে পারত বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। এছাড়া খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন বিএনপির কয়েকজন নেতার দাবি, ডা. জাহিদ ও তার সাথের লোকজন এসব নাটক কেন করেছেন, আমরা জানি না। তবে তাদের কারণে ম্যাডামের খারাপ কিছু ঘটলে কেউ নিশ্চয় লাভবান হতো।
বিএনপি নেতাদের এমন দাবি যৌক্তিক। খালেদা জিয়াকে বলির পাঁঠা বানানোর ঘটনাটির ছক পূর্বপরিকল্পিত। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হতো, তবে এ ঘটনাকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো, যা রুহুল কবির রিজভী, আমীর খসরুসহ বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে স্পষ্ট। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার যদি মৃত্যু হয়, তবে সরকার দায়ি! কী অদ্ভূত চিন্তাভাবনা। নিজেদের অবহেলায় ও ষড়যন্ত্রে খালেদা জিয়ার মৃত্যু ঘটলে সে দায় কেন সরকারের হবে? এখানেই শেষ নয়। যখন দেখা গেল খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন, এখন নতুন দাবি তুলেছেন রিজভী। তার দাবি, খালেদা জিয়ার খাবারে নাকি বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। আবার কখনো বলছেন ওষুধ খাইয়ে নাকি অসুস্থ করে রাখা হয়েছে! কী হাস্যকর দাবি!
খালেদা জিয়া তো সরকারের বদান্যতায় থাকছেন নিজ বাড়িতে, নিজের বিশ্বস্ত গৃহকর্মী ও পরিবারের মাঝে। তার খাবারে বিষ বা ওষুধ প্রয়োগ যদি করাও হয়, তবে আপন লোকই করবে। নিজের পেশাগত দায়িত্ব ফেলে খালেদা জিয়াকে দিনরাত দেখভাল করছেন ডা. জাহিদ নিজে। সাথে রয়েছে বিশেষজ্ঞ দল। এমন পরিবেশেও যদি খালেদা জিয়ার অস্বাভাবিক কিছু ঘটে, সেজন্য দায়ী হবেন তারা। তার কাছে তো প্রশ্ন রাখা উচিৎ খালেদা জিয়ার শুভাকাঙ্খীদের, ক'দিন পরপরই হাসপাতালে নিতে হয় যে খালেদা জিয়াকে, কেন তার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা ছিল না? তার পরিবারের কি সেই সামর্থ নেই? কেন খালেদা জিয়ার জন্য জরুরি ইনজেকশন হাতের কাছে ছিল না? যেখানে ঢাকায় অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, ফোন করলে মুহূর্তেই হাজির হয়ে যায়, সেখানে ইউনাইটেডের অ্যাম্বুলেন্সের জন্য এত নাটক করতে হলো কেন? যে এভারকেয়ারে নেওয়া হবে চিকিৎসার জন্য, সেখানেই ইনজেকশন প্রস্তুত রাখতে না বলে অন্য হাসপাতাল থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া টেলিফোনে ইনজেকশন পাঠানোর কথা বলতে হলো কেন? কেন ঘরের কাছের হাসপাতালে না নিয়ে দূরের হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো? এসব প্রশ্নের উত্তর বিএনপি কর্মীরা কি চাইবেন?
খালেদা জিয়ার দুর্ভাগ্য এমন জন্মগত অপরাধী চক্রের মাঝে শেষ জীবন কাটাতে হচ্ছে। কেউ কেউ ক্ষোভ থেকে একে কর্মফলও বলছেন। যে খালেদা জিয়া তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের জন্য সারাজীবন গর্ত খুঁড়েছেন, যাদের দিয়ে সেসব গর্ত খুঁড়িয়েছেন, আজ তারাই তার প্রাণনাশের চিন্তা করছে। খালেদা জিয়াকে বলির পাঁঠা বানিয়ে তার প্রাণনাশ করে দায় চাপাতে চাইছে সরকারের ওপর। এ কেমন রাজনীতি!
শেষ খবর হলো, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভোগা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার স্থাপন সার্জারি সফল হয়েছে। তিনি এভারকেয়ারের সিসিইউ থেকে বর্তমানে কেবিনে অবস্থান করছেন এবং শংকামুক্ত আছেন। তবে কতক্ষণ পর্যন্ত তাকে শংকামুক্ত রাখবেন নিজ দলের সুযোগসন্ধানীরা, প্রশ্ন সেটাই।
সম্পাদকীয় ও বাণিজিক কার্যালয়: ব্লক: ই, সেক্টর: ১৫, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০
নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৬১৯৮৭৭১৫৭, ইমেইল: news@hotnews24.news
সম্পাদক ইমেইল: editor@hotnews24.news, বিশেষ প্রয়োজনে: hotnewslive24@gmail.com
কপিরাইট ©2006-2024 hotnews24.news