বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি ছড়াচ্ছে গুজব, ঘৃণা। নিজেদের তৈরি করা গাইডলাইন ভেঙেই এসব কাজ করছে তারা। ফেসবুকের এমন কর্মকাণ্ড প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালেই স্পষ্ট।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে ফেক নিউজ, ঘৃণাপূর্ণ পোস্টের ঢল থামাতে পারছে না ফেসবুক। দলিলপত্র ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকের সবচেয়ে বড় বাজার ভারতে ফেক নিউজ, ঘৃণাপূর্ণ ও জ্বালাময়ী পোস্টের বন্যা রোধ করতে ওই বৃহৎ সোশাল মিডিয়া কোম্পানি এখন হিমশিম খাচ্ছে। এ যেন ‘সহিংসতার উৎসব’। https://www.bbc.com/bengali/news-59053572
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভারতে বিকৃত ও মিথ্যে তথ্য ছড়ানোর কাজটি করা হয় সংগঠিতভাবে এবং যত্নের সাথে। নির্বাচন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা করোনাভাইরাসের মতো ‘ঘটনায়’ ফেক নিউজের মহামারি আরও বেড়ে যায়।
এর বাইরে “বাক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা” বজায় রাখতে ফেসবুক রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণ এবং মতামতের বিষয়ে কোন ফ্যাক্ট-চেক করে না। এতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়।
ভারতে ফেসবুকের ব্যবহারকারী প্রায় ৩০ কোটি। তাদের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারী আরও বেশি, ৪০ কোটি। কাজেই বলা যেতে পারে এই সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির জন্য ভারত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাজার।
রাজনৈতিক বিতর্ক
ভারতে ফেসবুক কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখাচ্ছে এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণায় সহায়তা করছে বলে ২০২০ সালে একটি অভিযোগ ওঠে। https://www.bbc.com/bengali/news-54000991
ওই সময় ফেসবুকের শীর্ষ নির্বাহীদের ভারতের এক পার্লামেন্টারি কমিটির সামনে জবাবদিহিও করতে বলা হয়।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ঘৃণা এবং বিদ্বেষমূলক প্রচারণার বিষয়ে ফেসবুকের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে গেলেও ফেসবুক বিজেপির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়। তবে ভারতে ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিজেপি পাল্টা অভিযোগ করে বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধ পক্ষের প্রতি ফেসবুক পক্ষপাত দেখাচ্ছে।
পরে ফেসবুক দুই তরফ থেকে আসা অভিযোগই অস্বীকার করে
ফেসবুকের বিরুদ্ধে তখন সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ তোলা হয় তা হলো, তারা ভারতে মুসলিম বিরোধী প্রচারণা তাদের প্লাটফর্মে চালিয়ে যেতে দিচ্ছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ফেসবুকে এই কাজ বিজেপির প্রতি একধরনের পক্ষপাত।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল, বিজেপির একজন নেতা, যিনি আইন সভার সদস্য, তিনি কিছু মুসলিম বিরোধী পোস্ট দিয়েছিলেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ বিষয়ে ফেসবুকের কাছে জানতে চাইলে ফেসবুক সেসব পোস্ট ডিলিট করে দেয়। এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছিল, বিজেপি সমর্থক আরও অন্তত তিন ব্যক্তি একই ধরনের পোস্ট দেয়। এগুলো ছিল ফেসবুকের ‘ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা’ বিষয়ক নীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, এবং বিষয়টি ফেসবুকের নজরেও আনা হয়। অথচ তারপরও এসব পোস্ট ডিলিট করা হয়নি।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে ভারতের নির্বাচনের হস্তক্ষেপের অভিযোগ
ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছরের অক্টোবরে ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ তুলে ইন্ডিয়া মহাজোট। তাদের বক্তব্য, শাসক দল বিজেপির সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোর ক্যাম্পেনকে মদত দিচ্ছে মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক। এর পাশাপাশি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটেও বিরোধীদের দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ তুলে ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গকে চিঠি দেয় ইন্ডিয়া জোট। চিঠিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। চিঠিতে ভারতে সামাজিক বৈষম্য প্রচার এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার জন্য ফেসবুককে দায়ী করা হয়। https://bangla.hindustantimes.com/technology/india-alliance-wrte-letter-to-facebook-google-for-neutral-31697178572468.html
এর আগে ২০১৮ সালে ভারত-সহ বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ফেসবুক যে অতীতে ব্যর্থ হয়েছে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ২০১৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে তা কার্যত স্বীকারই করে নিয়েছিলেন। তবে তিনি তখন বলেছিলেন, আগামীতে সব ভুল শুধরে ফেসবুক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যই কাজ করবে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় বলা যায়, তিনি তাঁর কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। https://www.bbc.com/bengali/news-43727021