মোঃ শিফাত মাহমুদ ফাহিম, আত্রাই, নওগাঁ
ভোট গণনায় অনিয়ম ও সুকৌশলে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর আত্রাই ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের ৩য় ধাপের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। অভিযোগ তুলেছেন আফছার আলী প্রামানিক নামে এক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি ওই নির্বাচনে তালা প্রতিকে নির্বাচন করে হেরে গিয়েছেন। তার অভিযোগ সুকৌশলে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে একাধিক অনিয়ম তুলে তিনি গত বৃহস্পতিবার (৩০ মে) আত্রাই উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া পরের দিন শুক্রবার (৩১ মে) সকালে ভূক্তভোগী আফছার আলী প্রামানিক তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ ও সংবাদ সন্মেলন করেও তিনি কোনো সমাধান বা আশ্বাস পাননি। তাই হতাশ হয়ে গণমাধ্যমকর্মীর কাছে আবারও অভিযোগ তুলে ধরেন তিনি।
প্রার্থী আত্রাই উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আফছার আলী দাবি করে বলেন, গত ২৯মে আত্রাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই নির্বাচনে উপজেলার জনগণ স্বত:স্ফূর্ত ভাবে আমাকে ভোট প্রদান করেছেন। কিন্তু ৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টি কেন্দ্রে ভোট গণনায় তার প্রতি চরম অন্যায় এবং অবিচার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদেয় তিন হাজার ৮১০ভোট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রদেয় ভোটের সংখ্যায় এবং শতকরা হারে গড়মিল রয়েছে। তিনি বলেন, একজন ভোটার যখন ভোট দিতে যায় তখন তাকে তিনটি পদে তিনটি ব্যালট পেপার দেয়া হয়। এতে তিনটি পদেই প্রদেয় ভোটের সংখ্যা একই রকম হওয়ার কথা। অথচ উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত প্রাথমিক বেসরকারী ফলাফল সিটে চেয়ারম্যান পদে প্রদেয় ভোটের সংখ্যা ৭৩হাজার ২৪৮, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৩হাজার ২৩১এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৩হাজার ২৬৮প্রদেয় ভোট দেখানো হয়েছে। এতে কোনো পদের সাথে কোনো পদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যার মিল নেই। যা অনিয়মের নজির। তিনি বলেন, ঘোষিত বেসরকারী ফলাফলে নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুল শেখ এর ভোট দেখানো হয়েছে ৩৩হাজার ৫১৮এবং নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী হিসেবে আমাকে তালা প্রতিকে দেখানো হয়েছে ৩২হাজার ২৭৪ভোট। এতে ভোটের ব্যবধান দেখানো হয়েছে এক হাজার ২৪৪ভোট। অথচ বাতিল ভোটের সংখ্যা দেখানো হয়েছে তিন হাজার ৮১০ভোট। তিনি দাবি করে বলেন, আমাকে সুকৌশলে অনিয়ম করে হারানো হয়েছে। মোট বাতিলকৃত ভোট বাছাইপূর্বক এবং ৬টি কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনা করলে আমিই জয়লাভ করব। এঘটনায় মোট বাতিলকৃত ভোট বাছাইপূর্বক এবং ছয়টি কেন্দ্রের ভোট পুনরায় গণনার দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে আত্রাই উপজেলা সহকারী রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ভূক্তভোগী আফছার আলীর দাবি তার প্রতীকে সিল মারা একাধিক ব্যালট বাহিরে পাওয়া গিয়েছে। যেটা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। তাই তিনি পুনরায় বাতিলকৃত ভোট ও ছয়টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ভোট গণনা চান। তিনি বলেন, প্রধানমনত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক সারাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে। আমার এখানেও নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা আমাকে সুকৌশলে হারিয়ে দিয়েছে। আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। আমাকে যারা ভালোবাসেন এবং ভোট দিয়েছেন তারা আমার এই পরাজয়কে মেনে নিতে পারছেনা। সেই জন্য আমি উচ্চ আদালতে যাবো। এর শেষ দেখে ছাড়বো।
এদিকে তিনি সংবাদ সন্মেলনেও একই দাবি তোলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আত্রাই উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য স্বপন কুমার সাহা, আত্রাই উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফিউল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, সাবেক ছাত্র নেতা আমানুল্লাহ ফারুক বাচ্চু, পাঁচুপুর ইউনিয়ন সেচ্ছা সেবকলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাকিল হোসেন, সমাজ সেবক রতন প্রামানিকসহ দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
সুকৌশলে হারিয়ে দেওয়া ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে আত্রাই নির্বাচন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম অস্বীকার করে বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। আর প্রদেয় ভোটের শতকরা হার এক না হওয়ার কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা যেকোনো কারণে হতে পারে। দুই এক ভোটের গড়মিল হতেই পারে বলে জানান তিনি। এছাড়া দুই তিন ভোট কোনো প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করেনা। তবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ থাকলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করতে পারে। এতে বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যানের গেজেট স্থগিত হয়ে যাবে।
একইভাবে প্রদেয় ভোটের শতকরা হারের যে ব্যবধান রয়েছে তা অনেক কারণে হতে পারে জানিয়ে আত্রাই উপজেলা সহকারী রিটার্নিং ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, তার অভিযোগ সত্য নয়। ভোটে বা ভোট গণনায় কোন অনিয়ম হয়নি। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছি। আফছার আলী প্রামানিক যে লিখিত আবেদন করেছিলেন তা আমাদের এখতিয়ার ভুক্ত না হওয়ায় তাকে নির্বাচন কমিশন বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তার যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেটা এখন নির্বাচন কমিশন দেখবেন।