জাবেদ হোসাইন, হাটহাজারী
আউলিয়া কেরামের স্মৃতিধন্য চট্টগ্রাম জেলার বায়েজিদ থানার অর্ন্তগত জালালাবাদের এক ধর্মভীরু সম্ভ্রান্ত মুসলিম কাযী পরিবারে হাশেমী বংশে উপমহাদেশের প্রখ্যাত অলিয়ে কামেল,ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী আরবী মাসের ১৫ রজব ১৩৪৯ হিজরী সনে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা শাহ্ সুফী মাওলানা কাযী আহছানুজ্জমান হাশেমী (রহঃ) ছিলেন প্রসিদ্ধ হাশেমী বংশের একজন কৃতিমানপুরুষ। তাঁর মাতা ছিলেন বাংলার মোহাদ্দেসে আযম অলিয়ে কামেল চট্টগ্রাম শাহী জামে মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতীব আল্লামা ছফিরুর রহমান হাশেমী (রহঃ)- এর ঔরসজাত কন্যা। তাঁর পূর্বপুরুষ সৈয়্যুদুশ শোহাদা ইমাম হোসাইন (রাঃ)- এর বংশধর। তাঁর পিতার পূর্বপুরুষ মদিনা শরীফ হতে হিযরত করে বাগদাদে আসেন। তাদের বংশ ইমাম হাসান (রহঃ)-এর সাতে মিলিত হয়।ওখান থেকে দিল্লীর বাদশাহ্ আওরঙ্গজেব আলমগীরের আমলে কাজীউল কুজাত বা প্রধান বিচারপতি হতে দিল্লীতে আসেন।দিল্লী থেকে নবাবী আমলে ইসলাম খাঁর অনুরোধে কাজীর দায়িত্ব গ্রহন করে বিশেষত ইসলাম প্রচারের নিমিত্তে চট্টগ্রামে তশরীফ আনেন। হযরত গাউসে আযম আহমদ উল্লাহ্ মাইজভান্ডারী (রহঃ)-এর শ্রদ্ধেয় পীর কুতুবুল আরেফীন,ইমামুল মাশেয়েক হযরত খাজা ছালেহ লাহোরী (রহঃ)-এর সুযোগ্য খলিফা পাঁচলাইশ থানার বাকলিয়া নিবাসী মাওলানা সৈয়দ আব্দুন্নবী (রহঃ)এর কন্যা বিবি শরীফা খাতুনের সঙ্গে তাঁর দাদাজান মাওলানা কাজী আব্দুর রহীম হাশেমীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। উল্লেখিত জীবনে দেখলেই বুঝা যায় ইমামে আহলে সুন্নাত,আল্লামা কাযী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী (রহঃ) পিতা ও মাতা উভয় দিক থেকে তাঁর বংশধারা ছিল সম্ভ্রান্ত ও উঁচুস্তরের।
তিনি বাল্যকাল থেকেই তীক্ষন মেধাবী ও অত্যান্ত প্রতিভাবান ছিলেন। তিঁনি মাত্র ছয় বছর বয়সে ক্বোরআন মজীদ খতম করেন।উর্দু,ফার্সি,আরবী, বাংলার প্রাথমিক জ্ঞান স্বীয় গৃহে আপন বুযর্গ পিতার কাছ থেকে অর্জন করেন।অতঃপর প্রাইমারী স্কুল পাশ করে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রসিদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়াজেদীয়া আলীয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং নিয়মিতভাবে শিক্ষা অর্জন করেন। সেখান থেকে প্রত্যেকটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে ১৯৪৫ সালে জামাতে পঞ্জুমের পরীক্ষায় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর স্বরুপ সনদ ও মাদরাসর পক্ষ থেকে গোল্ড মেডেল লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে জামাতে উলা পর্যন্ত শিক্ষা কৃতিত্বের সহিত সমাপ্ত করেন। তিনি আরবী ভাষার বিভিন্ন বিষয়ে পান্ডিত্য লাভ করতে সক্ষম হন। আল্লামা হাশেমী উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে ঢাকা গমন করেন এবং তৎকালীন ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসাই আলীয়া ঢাকাতে ১৯৫১ সালে টাইটেল ক্লাশের হাদীস বিভাগে ভর্তি হন। তিঁনি তখনকার সময়ে পাক ভারতের অনন্য ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন আলেম শরীয়ত ও তরিকতের মাজমাউল বাহরাইন আরবী ও উর্দু ভাষায় বিভিন্ন বিষয়াদির উপর অগনিত গ্রন্থ রচিয়তা প্রখ্যাত আলেম আল্লামা মুফতি সৈয়দ আমীমুল এহছান মুজাদ্দেদী বরকতী কুদ্দেসা সিররুহুর সান্নিধ্যে থেকে ইলমে হাদীস, ফেকাহ, তাফসীর ইত্যাদি বিষয়ের উপর গবেষণা করে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন ও একাত্তর’র মুক্তিযুদ্ধের অবদান: ইমাম আল্লাম হাশেমী (রহ.)দ্বীনের সেবায়,রক্ষায়, চর্চায় ও দেশ চিন্তাই উদ্ভব থাকেন সারাক্ষণ। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা আলীয়া মাদরাসা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময় মাতৃভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহনে বাংলার প্রতি দরদ এবং ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও পরামর্শে এক বীরত্বপূর্ণ ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন।যা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। তদানিন্তন আলেম সমাজের চিরচারিত পাকিস্তান তোষন নীতির ব্যতিক্রম হিসেবে স্বাধনীতা সরাসরি সমর্থন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়-পশ্রয় দিয়েছেন ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা হাশেমী। ‘বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র ইসলামী চিন্তাবিদ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা, ছোবহানিয়া আলীয়া মাদ্রাসা ও ওয়াজেদিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় রাজাকার/আলবদর কমিটি গঠনে বাধা প্রধান করে সাফল্য লাভ করেছিলেন’। সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক জীবনে আল্লামা হাশেমী (রহ.)১৯৮০ সালে জামাতে আহলে সুন্নাতের অঙ্গসংগঠন হিসাবে আকাঈদে আহলে সুন্নাতের ধারক বাহক হিসাবে এদেশে সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনরত একক সুন্নী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা গঠনে গুরু দায়িত্ব পালন করেন।আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সুদৃঢ় করণে হুযুর কেবলা আজীবন অকøান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। বর্তমানে এদেশের সুন্নী আকীদা বিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্যের বিরাট দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’য়াতের কেন্দ্রীয় পরিষদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’য়াতের কেন্দ্রীয় পরিষদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, আহলে সুন্নাত সম্মেলন সংস্থা-বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্ঠা,এদেশের আ’লা হযরত চর্চা ও গবেষণার একমাত্র ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আ’লা হযরত ফাউন্ডেশন- বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্ঠা, জাতীয় ঈদে মিলাদুন্নবী কমিটির সম্মানিত আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৯ খ্রীষ্টাব্দে ২৯ সেপ্টেম্বর গাজীয়ে দ্বীনে মিল্লাত,ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা(রহ)র ইন্তেকালের পর তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কারনে ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা হাশেমী (রহ.)আজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। তাঁর অবদানের সুফল ও খ্যাতি শুধু স্বদেশেই সীমিত নয় বরং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। ১৯৮৭ সালে হুযুরের আধ্যাত্মিক তরিকত ভিত্তিক সংগঠন আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রাসূল (দ.) গাউছিয়া জিলানী কমিটি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে অসংখ্য স্থানে এর শাখা রয়েছে। দেশের বাইরেও বিশেষ করে ডুবাই ও আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুজুর কেবলাকে দাওয়াত দিলে হুজুর কেবলা সেখানে গিয়ে ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে ইসলামের বাণী পৌঁছান। এবংকি ১৯৯৪ সালে সুদূর আমেরিকায় অবস্থানরত সুন্নী মুসলমানদের প্রচেষ্টায় হুজুর কেবলা নিউইয়ার্ক,ফ্লোরিডা ও ওয়াশিংটংএ ওয়াজ-নসিহত করে যে হাদিয়া পেয়েছিল সেই হাদিয়া দিয়ে আমেরিকার নিউইয়ার্কে ডাউন টাউন এলাকায় মদিনা মসজিদ নামে একটি মসজিদ স্থাপন করেন। বাল্যকাল থেকেই হুযুর কেবলা নিখুঁত চরিত্রের অধিকারী এবং প্রিয়নবী ছরকারে দো’আলম (দ.)এর নকশে কদমের পূর্নাঙ্গ অনুসারী হিসাবে খ্যাত অর্জন করেছেন। সত্যবাদিতা, সুবচন, সদা হাস্যোজ্জল, অপরের খোঁজ খবর নেওয়া, আচার আচারণ, কথাবার্তা, ন্যায়পরায়ণতা জীবনের সর্বক্ষেত্র তিনি প্রিয় নবী (দ.)- এর একজন অকৃত্রিম অনুসারী হয়ে আজও সুন্নীজনাত মাঝে সুন্নীয়তের ছাঁয়া হিসেবে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তির হৃদয়ে। তার অনুপম চরিত্রে মু’মিন জীবনের এক অনুসরনীয় আদর্শ হিসেবে তিনি প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তির অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন এবং তাঁর হাতে গড়া মাহফিল সমূহ নিজ বাড়ীতে (দরবারে হাশেমীয়া আলীয়া শরীফে) অত্র সংগঠনের উদ্যোগে ১২ দিন ব্যাপী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দঃ) শীর্ষক সেমিনারের মাধ্যমে বিষয় ভিত্তিকভাবে প্রিয় নবী (দ.)- এর নূরানী জিবনাদর্শ জনসম্মুখে তুলে ধরার মাধ্যমে তিনি মানুষকে নবী আদর্শে আদর্শবান করতে উদ্বুদ্ধ করেন এছাড়াও (প্রতি চন্দ্র মাসের ৫ তারিখ খাজা গরীবে নেওয়াজ মাহফিল, প্রতি চন্দ্র মাসের ১০তারিখ বড়পীর গাউছে পাকের মাহফিল, প্রতি চন্দ্র মাসের ২৭ তারিখে মুজাদ্দেদ আলফেসানী স্মরণে মাহফিল) প্রতিষ্ঠা করে আজও সুন্নিয়তের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্ব দরবারে সকলের মাঝে সর্বস্থরের নবী, রাসূল পাক (দ.) ও ওলী, গাউস, কুতুব এর বাণী প্রচার করে আসছেন। বর্তমান সমাজের তরুণ প্রজন্মকে খারাপ কাজ থেকে দূরে সরিয়ে নবী- রাসূলদের আদর্শে আদর্শিত হয়ে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে ঈমানি দায়িত্ব পালনে অসহায়ক ভূমিকা পালন করে তিনি এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। হঠাৎ লাখো ভক্ত মুরিদানদের কাঁদিয়ে গত ০৯ শাওয়াল ১৪৪১ হিজরী তারিখে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান।
আজ ২ মে ২০২৪ইং তারিখে ইমাম আল্লামা হাশেমী (রহ.)’র চতুর্থ বার্ষিক ওরশ শরীফ মুরিদ-ভক্তের উপস্থিতে দরবারে হাশেমীয়া আলীয়া শরীফে মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।বাংলার জমীনে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মূল-¯্রােতকে গতিশীল রাখতে এবং আকায়েদে আহলে সুন্নাতকে প্রতিষ্ঠিত ও সমুন্নত রাখতে যে ক’জন মনীষীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও অকৃত্রিম অবদান চিরকাল অম্লান হয়ে থাকবে ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা হাশেমী (রহ.) তাঁদের অন্যতম।
সম্পাদকীয় ও বাণিজিক কার্যালয়: ব্লক: ই, সেক্টর: ১৫, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০
নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৬১৯৮৭৭১৫৭, ইমেইল: news@hotnews24.news
সম্পাদক ইমেইল: editor@hotnews24.news, বিশেষ প্রয়োজনে: hotnewslive24@gmail.com
কপিরাইট ©2006-2024 hotnews24.news