মো: সামিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধ
দুদিন আগেই সারাদেশ লন্ডভন্ড করে দেয় ঘূর্ণিঝড় রেমাল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলো। প্রাণহানি কম হলেও হাজার হাজার মানুষ হলেন গৃহহীন। কৃষিনির্ভর লাখো মানুষ সর্বস্বান্ত হলেন। ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, পশু খামার হয়েছে উজাড়। এই বিপুল সংখ্যক খেটে খাওয়া মানুষ কবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবেন, আদৌ পারবেন কি না, কেউ জানেনা। সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে সহযোগিতা নিয়ে। তবুও খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে অসহায় মানুষ। বিশ্বশান্তিতে অজানা কোনো অবদান রাখায় নোবেল পেয়েছেন যে ব্যক্তি, সেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক ৫২টি প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই নেই ঘূর্ণিঝড়ে সর্বস্বান্ত অসহায় মানুষের পাশে। অবশ্য অবাক হওয়ারও কিছু নেই। ড. ইউনূস কখনই দেশের কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন না।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৮৫, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর কথা বাদ, ড. ইউনূস ২০০৬ সালে নোবেল পাওয়ার পরবর্তী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। ২০০৭ সালের সিডরে প্রাণহানি হয় ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩২ জেলার ২০ লাখ মানুষ৷ উপকূলী এলাকায় ৬ লাখ টন ধান নষ্ট হয়ে যায়৷ ঝড়ে ১০ লাখ ঘর-বাড়ি ধ্বংস এবং ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। ২০০৯ সালে আইলায় ২ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও ৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়৷ ২০১৩’র মহাসেন, ২০১৫’র কোমেন, ২০১৬’র রোয়ানু, ২০১৭’র মোরা, ২০১৯ সালের ফণী ও বুলবুলে অসংখ্য মানুষ নিহত, গৃহহীন, সহায়-সম্বলহীন হন লাখো মানুষ। গবাদিপশু ও ফসলী জমির ক্ষতি তো আছেই। প্রায় প্রতিবছরই এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে। এছাড়া বড় বড় অগ্নিকান্ডে, দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি নিয়মিত। অথচ আজ পর্যন্ত কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ১ পয়সার ত্রাণ নিয়ে, সাধারণ মানুষকে স্বান্তনা দিতে, তাদের দুঃখমোচনে পাশে থাকার আশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসেননি অর্থগৃধ্নু ইউনূস।
যে ইউনূসের প্রতিষ্ঠান দারিদ্র বিমোচনের নামে সুদের নাগপাশে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে দরিদ্রদের শেষ সম্বল কেড়ে নিয়ে ভাগাড়ে ছুড়ে ফেলতে দ্বিধা করেনা, যার সুদের ফাঁদে পড়ে দারিদ্রমুক্তি নয়, গলায় ফাঁস দিয়ে, বিষ খেয়ে জীবন থেকে চিরমুক্তি ঘটে অসহায় মানুষের, সেই ব্যক্তি তো বিনা স্বার্থে দুর্যোগে সর্বস্বান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবেনা এটা জানা কথা। তবে অবাক ব্যাপার, নিজ দেশের মানুষের পাশে না দাঁড়ালেও বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে ইউনূসের মার্কিন কোম্পানি গ্রামীণ আমেরিকা। ইউনূসের যত ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা-ধান্দা, সবকিছুর গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকারের ছত্রছায়ায় নিরাপদ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন ইউনূস, যার শুরু বাংলাদেশি দরিদ্র নারীদের সর্বস্বান্ত করে লুটে নেওয়া অর্থ দিয়ে। ২০০৬ সালে নোবেল পাওয়া ইউনূস ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার পরিধি বাড়ান বন্ধু হিলারির সহায়তায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামীণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ১৪টি রাজ্যের ২৭টি শহরে ২ লাখের বেশি নারীকে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। ফিনিক্সে নতুন যে শাখা খুলছেন তিনি, সেখান থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে আরও ২ হাজার নারীকে ১৪ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিবে। ফিনিক্স ছাড়াও অ্যারিজোনাসহ আরও অনেক রাজ্যে শাখা খুলছেন ইউনূস। অথচ নিজ দেশের কোনো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াননি চরম দুর্যোগেও।
এই ইউনূস জাতিকে হাজার হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি, গোপনে এক প্রতিষ্ঠানের টাকা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ঘুরিয়ে বিদেশে পাচার করা, কর্মীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করে পাল্টা মামলা দিয়ে, চাকরিচ্যুত করার মত জঘন্য অপকর্ম ছাড়া আর কিছুই দেননি জাতিকে। তার বিশ্বশান্তিতে অবদান যেমন শূন্য, তেমনি জাতির জন্যও তিনি একটা বিরাট শূন্যতা বা ব্ল্যাকহোল ছাড়া আর কিছু নন। তার নোবেল জয় যে বিল ক্লিনটন ও হিলারির লবিংয়ের ফল তা ইতিমধ্যে সবাই জানেন। তবে অনেকেই জানেন না, শান্তিতে নোবেল ইউনূস একা পাননি, তার সঙ্গে পেয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকও। কিন্তু ইউনূসের বাগাড়ম্বরে ঢাকা পড়ে গেছে গ্রামীণ ব্যাংক।
বিভিন্ন দেশে নোবেল বিজয়ীরা নিজ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। নোবেলজয়ীদের দেখে তরুণরা উৎসাহিত হন়। নতুন চিন্তা, গবেষণা ও বিজ্ঞানমনস্কতা সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে, সমাজ ঋদ্ধ হয়। ইউনূসের কাছ থেকে জাতি কি তেমন কিছু পেয়েছে? বরং তার চুরি আর ধান্দাবাজির খবরে জাতি কলঙ্কিত হয়েছে। ভারতে নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান বিশ্ববাসী জানেন। আরও নোবেল পেয়েছেন ড. অমর্ত্য সেন। তিনি পুরস্কারের অর্থে প্রতীচী ফাউন্ডেশন করেছেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেকে গবেষণা করছেন। বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে ভারতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার তৈরি হয়েছে ড. অমর্ত্য সেনের হাত ধরে। কিন্তু ইউনূসের অবদান জিরো। নোবেল পুরস্কারের অর্থও তিনি দেশে রাখেননি। সেই অর্থে জনকল্যাণ বা শিক্ষা গবেষণায় কোনো উদ্যোগ নেননি। নোবেল পেয়ে তিনি বাংলাদেশের শান্তি তো নয়, বিশ্বশান্তিতেও কোনো ভূমিকা রাখেননি। রাখাইনে, ফিলিস্তিনে গণহত্যা নিয়ে তিনি সবসময় মার্কিন স্বার্থে চুপ থেকেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও তিনি চুপ। নোবেল পেয়ে তীব্র অর্থলিপ্সা ও নিজেকে জাহির করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে গেছেন ইউনূস। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অর্থের বিনিময়ে বক্তৃতা দেন সামাজিক ব্যবসার নামে। বিশ্বব্যাপী ব্যবসার পরিধি বাড়িয়েছেন। যার আয়-ব্যয়ের হিসাব কেউ জানেনা।
ইউনূস আসলে দেশকে কী দিয়েছেন- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে হতাশাই মিলবে। কেন তার কাছ থেকে দেশ ও জাতি গঠনমূলক কিছু পেল না, এর উত্তর অজানা। তবে দেশ নিয়ে যে তার তীব্র অনীহা, উদাসীনতা ও ঘৃণা রয়েছে, তা স্পষ্ট। কারণও জানা। ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব ইউনূসের রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। এরপর থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের দেশ মনে করেন। সকল সম্পদ সেখানেই গচ্ছিত করছেন। সময় সুযোগ পেলেই ইউনূস বিদেশে পাড়ি জমান। দেশের কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তাকে দেখা যায় না জনসম্মুখে। স্বার্থপর ব্যক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ ড. মুহাম্মদ ইউনুস।