অতীতের সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো এবারের ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবেও জনগণের পাশে দাঁড়ানোর মতো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও পলাতক আসামী তারেক রহমানের নামে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দায়সারা একটি ফেসবুক পোস্ট দেওয়া হলেও তাতে কোনো সাড়া ছিল না। দেশের এমন দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও বিএনপির লক্ষ্য শুধু সরকারের সমালোচনা করা ও ক্ষমতায় যাওয়া।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তাদের মধ্যে দুইজন নারী ও আটজন পুরুষ।
এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান গতকাল রোববার মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে জানিয়েছেন, উপকূলের প্রায় ৯ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র (সাইক্লোন সেল্টার) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সন্ধ্যার মধেই প্রায় আট লাখ লোক আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে সেবা কার্যক্রমের জন্য প্রায় ৮০ হাজার সেচ্ছাসেবী এবং ১১৮৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এমনকি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর টাস্কফোর্স দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তদারকি করছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
এছাড়া আগাম সতর্কবার্তা প্রচারসহ আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন ও প্রস্তুতের কাজ করছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। পাশপাশি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন (এএফডি), ফায়ার সার্ভিস ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে। প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সওজ, এলজিইডিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থাকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকে সহায়তা প্রদানের ঘোষণা প্রদান করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগও।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সেখানে তিনি বলেছেন, জলোচ্ছ্বাসে অনেক জনপদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় মহাবিপৎসংকেত চলছে। তখন মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছেন তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। ঢাকাসহ সারাদেশে যখন ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তুমুল ঝড়-বৃষ্টি চলছে, তখন দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা জেলা বিএনপির আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক তারেক রহমানের বরাত দিয়ে বিএনপির অফিসিয়াল পেজ থেকে একটি পোস্ট করা হয়েছে। তবে ওই পোস্টে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কোন অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট নেই যেমনটা রয়েছে গুম-খুন ইস্যু, নেতাকর্মীর মৃত্যুতে শোকবার্তা ও জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ বার্ষিকী বিষয়ে অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট। দলটির পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কোন অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট বা নির্দেশনা প্রচার করা হয়নি।
গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সরকার যখন ব্যস্ত, তখনও সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যায় বিএনপি। সম্প্রতি দলটির বেশ কিছু সূত্র থেকে জানানো হয়, জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্ত হয়ে সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করবে তারা। কিন্তু সর্বশেষ তাদের কর্মসূচি অনুসারে শুধু সরকারের সমালোচনা ছাড়া জনসম্পৃক্ততার তেমন কোন বিষয় উঠে আসেনি।