মো: জাহিদ হাসান সাব্বির, রাজশাহী
প্রায় তিন বছর যাবৎ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের একটি বিতর্কিত বিষয়ের তদন্তের অবসান হলো দুর্নীতি দমন কমিশনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। গত ১২ মে ২০২৪ তারিখে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহা. মোকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে জনপ্রতি ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণপূর্বক ছয়জন কর্মকর্তাকে বিধি বহির্ভুত পদোন্নতি প্রদানের অভিযোগটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি অনুসন্ধানে প্রমাণিত না হওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তার পরিসমাপ্তি ও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের কপি মন্ত্রীপরিষদ সচিবসহ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, পরিচালক, দুদক প্রধান কার্যালয়, উপ-পরিচালক, দুদক, রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরসমূহে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, এই উদ্দেশ্যমূলক অসত্য অভিযোগ উত্থাপন করে হয়রানি মূলক ভাবে ড. মোকবুল হোসেনকে গত ২৩-১১-২০২১ তারিখে ওএসডি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ন্যস্ত করা হয়। অপরদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রজ্জু হয়। মামলায় দু’টি বিষয়ে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রথম অভিযোগ- বিধিবহির্ভুতভাবে পদোন্নতির আদেশ, দ্বিতীয়টি তদন্তকাজে অসহযোগিতার জন্য অসদাচরণের অভিযোগ। অভিযোগ দুটির প্রেক্ষিতে সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোকবুল হোসেন ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন- ১৯৬১ সালের অর্ডিনেন্স এর ১৮(২), (১২) মোতাবেক এবং এসআর ৬৫ এর ২ বিধি অনুসারে চেয়ারম্যানের দ্বারা শিক্ষাবোর্ডের জনগণ নিয়োগ ও পদোন্নতির জন্য অস্থায়ী আদেশ প্রদানের নির্বাহী ক্ষমতা রয়েছে । তিনি নির্বাহী প্রধান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, জনসেবা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অস্থায়ী আদেশ প্রদান করেছেন, যা পূর্বাপরভাবে চেয়ারম্যানের রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে প্রচলিত ও চর্চিত। অপরদিকে, মন্ত্রণালয় কর্তৃক দ্বিতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা যুগ্মসচিব মুকেশ বিশ্বাসকে সাবেক চেয়ারম্যান যথাসময়ে ই-মেইল ঠিকানায় দাপ্তরিক পত্র ও টেলিফোনিক আলাপের মাধ্যমে অবহিত করেন যে, তদন্তের তারিখে (২৩/২/২০২১) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগবোর্ডের জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে তার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। বিধায় পুনরায় তারিখ নির্ধারণে অনুরোধ জানানো হয়। তার বিধিসম্মত ও জনস্বার্থমূলক দায়িত্ব পালনের ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দয়ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালক্ষেপন করে প্রায় ৩ বছর ওএসডি রেখে তাঁকে দণ্ডাদেশ প্রদান করে। দণ্ডাদেশটিও জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরি বিধিবিধান ও অর্থমন্ত্রণালয়ের বেতন ভাতা এবং পেনসন বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সুতারাং প্রজ্ঞাপনটি প্রশ্নবিদ্ধ।
এবিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে যোগাযোগ করলে এক কর্মকর্তা জানান, ড. মোকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে শিক্ষা সচিব কর্তৃক প্রদত্ত দণ্ডাদেশটি অস্পষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কেননা ড. মোকবুল হোসেনে চাকরির মেয়াদ যখন ১ বছর তখন তাঁর চাকরির মেয়াদ বিবেচনা না করে তাঁকে ২ বছরের জন্য দণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পেনশন ও বেতনবিধির সঙ্গে এই আদেশটি সম্পূর্ণরূপে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ এবছর পহেলা নভেম্বর তিনি অবসর গহণের পরেও তাঁর দণ্ডের মেয়াদ এক বছর বহাল থাকবে। এককথায়, দণ্ডাদেশটি সম্পূর্ণরূপে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবিবেচনাপ্রসূত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুশাসন পরিপন্থী একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এই সব বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমার পেশাগত সাফল্যে ঈর্ষান্বিত একটি কুচক্রী মহলের দ্বারা আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার প্রতি দুদক সুবিচার করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি অসত্য ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রেক্ষিতে অযৌক্তিক ও অনায্য দণ্ড প্রদান করেছে। এই বিষয়ে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি জাতির একমাত্র ভরসাস্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট বাংলাদেশ সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন) এর ৩৭ বিধি মোতাবেক আদেশটি পুণ:নিরীক্ষণের অনুরোধ জানাচ্ছি। উক্ত বিধি মোতাবেক মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পুণঃনীরিক্ষণের জন্য সকল নথিপত্র মন্ত্রণালয় থেকে নিজ দপ্তরে তলব করতে পারেন। প্রজাতন্ত্রের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাই জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নন। আমি আশান্বিত যে, দুদকের তদন্তে প্রকৃত সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
সম্পাদকীয় ও বাণিজিক কার্যালয়: ব্লক: ই, সেক্টর: ১৫, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০
নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৬১৯৮৭৭১৫৭, ইমেইল: news@hotnews24.news
সম্পাদক ইমেইল: editor@hotnews24.news, বিশেষ প্রয়োজনে: hotnewslive24@gmail.com
কপিরাইট ©2006-2024 hotnews24.news