অরবিন্দ পোদ্দার, নলছিটি ।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও স্বীকৃতি মেলেনি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ১৪টি শহীদ পরিবারের।
৭১’র ২৫শে মার্চ নিরীহ বাঙ্গালীর উপর পাকিস্তানীরা নির্বিচারে গনহত্যা চালায়।
দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্বের মানচিত্রে যোগ হয় একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ বাংলাদেশ, আমরা পাই লাল-সবূজের পতাকা।
মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে ৩০ লক্ষ মুক্তিকামী জনতার জীবন ও দুই লাখ মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বিজয়। এই লাখো শহীদের সাথে যোগ হয়েছিল নলছিটি উপজেলার ১৪ জন শহীদের নামও।
১৯৭১ সালে ১১ই মে নলছিটি থানায় তৎকালীন এস আই মো: ইউসুফ আলী উপজেলার ১২৬ জন সম্ভ্রন্ত ব্যাক্তিকে থানায় দাওয়াত দেয়।
এদের মধ্য থেকে ১৪ জন গন্যমান্য হিন্দু নেতাকে শান্তি আলোচনার কথা বলে ২ দিন বিনা অপরাধে থানায় আটক রাখে । ১৩ মে পাকিস্তানি দোষর আলবদর রাজাকারের সহায়তায় তামাক পট্টির খালের মুখে ( বর্তমান থানার খাল) সুগন্ধা নদীর তীরে হাত ও চোখ বেঁধে পুলিশ সাড়িবদ্ধ অবস্থায় দাড় করায়। পরে রাজাকারদের উস্কানীতে পুলিশ গুলি করে তাদেরকে হত্যা করে।
১৩ মে গুলি খেয়ে যারা শহীদ হয়েছিলেন তার হলেন ভাষান পোদ্দার, কেষ্ট মোহন নন্দী, শ্যামা কান্ত রায়, দশরথ কুন্ড, হরিপদ রায়, অক্ষয় কুমার আচার্য্য, কার্তিক চন্দ্র ব্যানার্জী, শচীন্দ্র নাথ দে, অতুল চন্দ্র কুঁড়ি, নেপাল চন্দ্র কুঁড়ি ও সুকুমার বনিক।
সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও আলৌকিক ভাবে বেঁচে যান ৩ জন। তাঁরা হলেন খিতিশ চন্দ্র দত্ত, অনীল চন্দ্র দে, কালিপদ মজুমদার।
১৩ মে যারা জীবন দিয়েছিলেন বা অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা ছিলেন নলছিটির ধরনাঢ্য পরিবারের সদস্য।
শহীদ হরিপদ রায়ের নাতি অ্যাডভোকেট বিপ্লব কুমার রায় বলেন ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু হলে তারা তাদের ধন সম্পদ নিয়ে ভারতে চলে যেতে পারতেন। কিন্তু স্বাধীনতাকামী এই মহান মানুষগুলো দেশ ভালোবেসে সম্পদের কথা,পরিজনদের কথা না ভেবে বাংলাদেশকে ভালোবেসেছিলেন। আর এই সুযোগ নিয়ে রাজাকার আলবদররা পুলিশের সহযোগিতায় ধরে নিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। যে মানুষগুলো স্বাধীন বাংলাদেশে থাকার জন্য দেশ ত্যাগ করেননি তারা জীবন দিলেও স্বীকৃতি পেলেন না।
উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গেলেও ওখানে শহীদ হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তাদের পরিবার পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা।
বেঁচে যাওয়া ক্ষিতিষ দত্ত’র নাতি প্রদ্যুৎ দত্ত বলেন দাদুকে প্রতি বছর শহীদ বেদিতে নিয়ে যাওয়া হতো। দাদু আপশোষ করতেন দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করলেও পাননি স্বীকৃতি। এই ক্ষোভ নিয়েই তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন । আমরাও অনেক চেষ্টা করেছি কিন্ত মেলেনি তেমন কোনও সারা।
শহীদ শিক্ষক শচীন্দ্রনাথ দের ছেলে শিবু প্রসাদ দে বলেন যখন দেখি বধ্যভূমার ফলকে বাবার নাম শহীদ হিসেবে খোদাই করা তখন কষ্ট লাগে। যিনি বাংলাদেশের জন্য জীবন দিলেন শহীদ হিসেবে তার নাম লেখা থাকলেও আজ পর্যন্ত আমারা পেলাম না শহীদ পরিবারের মর্যাদা।
ভাষান পোদ্দার’র নাতি অরবিন্দ পোদ্দার বলেন আমাদের পরিবর দেশের জন্য ত্যাগ করেও মর্যাদা পায়নি। এ লজ্জা শুধু আমাদের না সবার।
আজও শহীদ পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনের খোজে তামাক পর্টি খালের মুখে অশ্রু বিসর্জন দেন। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রতি বছর জাতীয় দিবসে ফুল দিতে ছুটে যান বধ্যভূমিতে।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হলেও স্বজন হারা মানুষগুলো শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এবিষয়ে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।