মৌলবাদী শক্তির পক্ষে জিহাদি প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’ নামে বুয়েট ভিত্তিক ফেসবুক গ্রুপের বিরুদ্ধে। এই গ্রুপ থেকে ছাত্ররাজনীতিকে কেন্দ্র করে ভিত্তিহীন একাধিক ‘ভবিষ্যৎ দুর্নীতি’র তথ্য প্রচারের পাশাপাশি সম্প্রতি প্রচার করা হয়েছে মৌলবাদী শক্তির পক্ষের প্রচারণা। যেখানে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের চালানো ধ্বংস কার্যক্রমে অংশ নেয়ার জন্য ‘শহীদ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় হয় এক শিক্ষার্থীকে।
শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত ইসলামের মৌলবাদী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ব্যাংক এলাকায় তাণ্ডব চালানো হয়। হেফাজতের এই তাণ্ডবে মৌলবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে অংশ নেন বুয়েটের আহসানউল্লাহ হলের আবাসিক ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী একেএম রেহান হাসান (২২)। বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের মতো মৌলবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হেফাজতের সমাবেশে যোগ দেন তিনি। আর এ কারণেই বুয়েট ঘিরে সম্প্রতি মৌলবাদী গোষ্ঠীর উত্থানে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।
অবশ্য বুয়েটের আড়িপাতা গ্রুপে এই শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে কোন উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি। ব্যাংক পাড়ায় একাধিক ভবনে ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়েও কোন উদ্বেগ বা অনুশোচনা প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকার পরও বুয়েটে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী হিযবুতের কার্যক্রম ও শিবিরের কমিটি প্রদান করা হলেও তা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়নি এই গ্রুপে। বরং ৫ মে দিনে মৌলবাদী গোষ্ঠীর মতই ‘শহীদ’ হিসেবে স্মরণ করা হয় সেই শিক্ষার্থীকে, যিনি মৌলবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে শাপলাচত্বর থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত চালিয়েছিলো ধ্বংসযজ্ঞ।
‘বুয়েটে আড়িপেতে শোনা’ গ্রুপে মো তারিকুল ইসলাম রাসেল নামের এক সাবেক বুয়েট শিক্ষার্থী মৌলবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে অংশ নিয়ে মারা যাওয়া বুয়েট শিক্ষার্থী রেহান সম্পর্কে লেখা হয়, ‘আজ ৫ মে। ১১ বছর আগে আজকের দিনে রেহান আহসান ভাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। আল্লাহ তাআলা উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নবীব করুন।’
কোন প্রশ্ন ছাড়াই এই পোস্টটি এপ্রুভ করে দেন এই গ্রুপের এডমিনগণ। সেখানে প্রশ্ন করা হয়নি, কাদের প্ররোচনায় রেহান মৌলবাদী কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলো? কেনো অংশ নিয়েছিলো? রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের এক প্রক্রিয়ায় কেনো অংশগ্রহণ করেছিলো সে বুয়েটের শিক্ষার্থী হয়ে? এই পোস্টের কমেন্টে সাবেক বুয়েটিয়ান তানভির মাহমুদুল হাসান এমন অনেকগুলো প্রশ্ন করেছেন। তিনি লেখেন, ‘সেদিন বুয়েটের যে ছেলেটা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলো, সেকি একাই গিয়েছিলো হেফাজতের ডাকে? নাকি দল বেঁধে গিয়েছিলো? কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিলো? বুয়েটের কতজন ছিল তার সাথে? অপরাজনীতির ছোঁয়ায় রেহানের মত ছেলেরা যেন সুন্দর জীবন ছেড়ে মৃত্যুর পথ বেছে না নেয় সেই ব্যাপারে সচেতনতা জরুরি।’
বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেফাজত ইসলামের রাজনীতির সঙ্গে রেহান বা তা পরিবারের বুয়েটে ভর্তির পূর্বে কোন সম্পর্ক ছিলো না। এমনকি তার পরিবারের সদস্যরা রেহানের হেফাজতের র্যালিতে অংশগ্রহণের বিষয়েও কিছু জানতো না। বরং বুয়েটে থাকা একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী রেহানের মত ছেলেদের বিপথে নিয়ে যায়। আর এ কারণেই বুয়েট শিক্ষার্থীদের মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের আবেদন জানান তারা।