তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
বিপন্ন বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। ১ হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের চিরহরিৎ এ বনের জমি বিভিন্ন সময় দখল হয়েছে। বনের জমিতে গড়ে তুলেছে বিলাসবহুল রিসোর্ট এমন অভিযোগও রয়েছে। দখলদারদের তালিকায় রয়েছেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ। যদিও তার দখলে থাকা সাড়ে পাঁচ একর জমি পুনরুদ্ধার করেছে বন বিভাগ। শুধু মো. আব্দুস শহীদ নন, বিভিন্ন সময় বনের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ফলের বাগান। এসব জমি উদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। গত রোববার আরো চার একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, বনের জমি দখল, নির্বিচারে বন উজাড়ের ফলে খাদ্য ও আবাস সংকটে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষের হাতে মারা যাচ্ছে অনেক বন্যপ্রাণী। বনের জমি উদ্ধার করে বন্যপ্রাণীর খাদ্য উপযোগী গাছ লাগানো প্রয়োজন। তাতে বন যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকটও দূর হবে।
বন বিভাগ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ বনের জমি দখল করে লেবু চা বাগান তৈরি করেছিলেন। ২০১৮ সাল থেকে বন বিভাগ বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও জায়গাটি উদ্ধার করতে পারেনি। সম্প্রতি পাঁচ একর জমি পুনরুদ্ধার করেছে বন বিভাগ। সেখানে লেবু গাছগুলো কেটে বন্যপ্রাণীর খাদ্য উপযোগী গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়কারী শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, ‘লাউয়াছড়ার দখল হওয়া বাকি জমিগুলো অবশ্যই উদ্ধার করতে হবে। তার চেয়ে বড় কথা ভবিষ্যতে আর কেউ যাতে দখল করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য লাউয়াছড়ার স্থায়ী সীমানা চিহ্নিত করতে হবে। সীমানা চিহ্নিত করতে না পারলে আবারো বনভূমি দখলের আশঙ্কা রয়েছে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা সাড়ে পাঁচ একর জমি উদ্ধার করে গাছের চারা রোপণ করেছি। কিছু জায়গায় লেবু গাছ ছিল, কিছু জায়গা ফাঁকা পড়ে ছিল। জমি দখল করে লাগানো লেবু গাছ তুলে হরিতকী, বহেড়া, জাম গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।’
মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বনের জমি নিয়ে দুটি মামলা চলমান। বাকি দখলদারদের কাছ থেকে বনের জমি উদ্ধার করা হবে। বনের সীমানা চিহ্নিত করতে ভূমি জরিপ করতে হবে। এ কাজের সঙ্গে অনেক ডিপার্টমেন্ট জড়িত। বিশেষ করে সেটলমেন্ট ডিপার্টমেন্ট। তাদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। জরিপের পর বনের জমি চিহ্নিত ও সীমানা নির্ধারণ করা যাবে। সীমানা নির্ধারণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।