মোঃআল আমিন, মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের প্রবাসী মিন্টু মিয়া ২২বছর প্রবাসে থাকার পর হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান তিনি।আর এই দিকে বিয়ের কয়েক বছর পেরুতেই পিপাসা হারিয়েছেন তার স্বামীকে।এমনকি শ্বশুরবাড়িতেও ঠাঁই হচ্ছে না তার।স্বামী যখন প্রবাসে মারা যান তখন ৬মাসের গর্ভবতী ছিলেন পিপাসা।যে বাচ্চাটি গর্ভে ছিল এখন তার বয়স ৭/৮ মাস হবে এই সন্তানটিও মেয়ে।
স্বামী হারানোর শোক আর সন্তানদের কথা চিন্তা করে এখন দিশেহারা পিপাসা খাতুন।
মিন্টু মিয়ার স্ত্রী মোছাঃপিপাসা খাতুন বলেন, আমার স্বামী প্রবাসে প্রায় ২২ বছর যাবত ছিলেন।পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী, এটা এলাকার মানুষ সবাই জানে।আমার স্বামীর টাকায় আজ বাড়ি,দোকানপাঠ এমনকি সম্পত্তি হয়েছে।অথচ আমার স্বামীর মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি তো দূরের কথা আমি আমার এই ছোট ছোট বাচ্চা গুলোকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে উঠতে পারতেছি না।
আমি আমার স্বামীর বাড়িতে আসলে আমার শ্বশুর আমাকে ঘরে ডুকতে দেয় না,এমনকি উনি আমাদেরকে বের করে দিয়ে ঘর তালা লাগিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়।আমি যতবারই আসছি এলাকার মেম্বার সহ স্থানীয় লোকদেরকে সাথে নিয়ে আসছি,তাদের ও কারো কোন অনুরোধ শুনে না আমার শ্বশুর।
পিপাসা জানান, বিভিন্ন আত্বীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাবার বাড়িতে কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছি।আমার স্বামী প্রবাসে ব্যবসা করতেন আমার বড় আপুর স্বামী ও বাহিরে থাকতেন উনিও বাহিরে মারা যান। মারা যাওয়ার পর আমার আপু প্রবাস থেকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা পান,এই টাকাটা এবং আপুর একাউন্ট থেকে আরো ১৮লক্ষ টাকা আমার স্বামী আপুকে বুঝিয়ে উনার ব্যবসায় ডুকিয়ে দেন আর আপুকে বলেন আপনার প্রয়োজন হলে বইলেন আমি দিয়ে দিব,আপুর প্রয়োজনের সময় আমার স্বামী ১০ লক্ষ টাকা ফেরত দেন বাকী ১৪ লক্ষ টাকা আপু পাওনা ছিল।আমার স্বামীর মৃত্যুর পর এই টাকার জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বার সহ সবাই বসে সালিশ করে ৮লক্ষ টাকা রায় দেয় এবং একটি লিখিত কাগজ করেন এই টাকাটা তারা এখনো দেন নাই,উল্টো অনেক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।
শোক ও উৎকন্ঠায় দিশেহারা পিপাসা বলেন, স্বামী হারানোর শোক যে কি যার স্বামী হারিয়েছে সেই জানে। এতকিছুর মাঝে আমি আরো বড় আঘাত পেয়েছি আমার স্বামী মারা যাওয়ার ৭ দিনের মাথায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বিনা কারণে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। গর্ভাবস্থায় আমার শ্বশুর আমাকে হাত ধরে বের করে দেন। আমি পাশের বাড়িতে থেকে আমার বাবাকে ফোন দেই বাবা এসে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এদিকে গর্ভবতী অবস্থায় আমি কোলের মেয়েটি নিয়ে চলে যাই বাবার বাড়ি তারপর মেয়েটি জন্ম হয়েছে। তার বয়স ৭/৮মাস হতে চললো।এই ৪টি মেয়ে নিয়ে আমি কেমন আছি একদিন ওরা আমার সন্তানদের খোঁজ নিতে আসে নাই।
তিনি বলেন, স্বামী হারিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। তার উপর শিশু সন্তানসহ এই ৪টি মেয়ে নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো, কি করবো ভেবে পাই না। আমার ভবিষ্যৎ এখন মিন্টুর রেখে যাওয়া আমানত সন্তান গুলো। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। আমি আমার সন্তান গুলোকে মানুষের মত মানুষ করতে চাই।আমি কোন টাকা পয়সা বা সম্পত্তি চাইতেছি না,আমি আমার স্বামীর বাড়িতে সেই আগের মত থাকতে চাই।
মিন্টু মিয়ার স্ত্রী পিপাসা খাতুনের অভিযোগের ভিত্তিতে তার শ্বশুরকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি সে ঘর তালা দিয়ে চলে যায়,তার শ্বাশুড়ি ছিল ঘরের ভিতর তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন,আমরা তাকে আমাদের বাড়িতে তুলব না তাকে কিছু দিয়ে বিদায় করতে হলে আমরা তা দিয়ে বিদায় করে দিব।
মিন্টুর চাচাত ভাই সহ আশেপাশের সকল প্রতিবেশীদের একটায় কথা,মিন্টুর স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সাথে যা হচ্ছে তা অমানবিক। আমরা চাই সে তার ন্যায় বিচারটা যেন পায়,আমরা সবাই মিন্টু বাবা এবং পরিবারের লোকদের বুঝানোর চেষ্টা করলাম তারা কারো কোন কথায় পাত্তা দিচ্ছে না।
বহরা ইউনিয়নের মেম্বার ফরিদ মিয়া বলেন,আমরা চেষ্টা করছি এই মেয়েটির অধিকার ফিরিয়ে দিতে,এর আগেও অনেক সালিশ করেছি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে।মেয়েটির শ্বশুর বাচ্চা গুলোসহ তাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করতেছে, সে কারো কোন কথায় পাত্তা দিচ্ছে না।
মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল মহোদয় কে এই বিষয়টি অবগত করলে উনি বলেন, আমি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে ফোন দিচ্ছি এবং আমি নিজেও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।