ডেস্ক রিপোর্ট
ভারতকে রেলট্রানজিট দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করছেন একদল মানুষ। তাদের মতে, এর কারণে ভারত দেশ দখল করে নেবে। অবশ্য পাকিস্তানের শাসনামল থেকে এক দল গোষ্ঠী এমন বক্তব্য দিয়ে এসেছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। প্রশ্ন উঠেছে, ট্রানজিট দেওয়া মানেই কি দেশ বিক্রি?
২০১০ সালে বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির পর থেকেই নানা মহলে সমালোচনা ছিল তুঙ্গে। তখনও এ নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়।
ভারত দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশের নৌরুট ও সড়কপথে ট্রানজিট পেয়ে আসছে। স্বাধীনতার আগে ভারত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর দিয়েও নৌ-ট্রানজিট পেত। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো ‘অভ্যন্তরীণ নৌ-ট্রানজিট ও বাণিজ্য’ প্রটোকল স্বাক্ষর হয়। এর আওতায় ভারতীয় নৌযানগুলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ও বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে পারত।
ভারতকে রেলযোগে সরাসরি নিজেদের পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে যে সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, আরেকটি দেশকে ট্রানজিট দেওয়া যদি দেশ বিক্রি করা হয় তাহলে বলতে হয় ইউরোপের সকল দেশ আরেক দেশের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। বিষয়টিকে আরেকটু অন্যভাবে বললে বলা যায়, শক্তিশালী জার্মান, ফ্রান্সের মতো রাষ্ট্রের কাছে কি ইউরোপের বাকি রাষ্ট্রগুলো বিক্রি হয়ে গেছে?
ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হতে ২০০৭ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ। এ নেটওয়ার্কের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোর মধ্যে সহজেই পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়েতে যুক্ত হতে হলে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া ছাড়া তা সম্ভব নয়। কেননা বাংলাদেশের স্থল সীমান্তের অল্প কিছু অংশ বাদ দিলে বাকি পুরোটাই ভারতের দ্বারা বেষ্টিত।
এই ট্রানজিট বিষয়ক সমালোচনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ভারত সফর শেষে করা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন, “একটা দেশের সঙ্গে আরেকটা দেশের ট্রানজিট দিলেই-বা ক্ষতিটা কী?”
“ইউরোপের দিকে তাকান। সেখানে কোনও বর্ডার নেই। তাহলে কি এক দেশ আরেক দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? তাহলে সাউথ এশিয়ায় আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো?”
দেশের মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
“(ভারতের সঙ্গে) রেল যেগুলো এতদিন বন্ধ ছিলো, সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। তাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে,” তিনি বলেন।
“এই যে আমরা সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আমাদের দেশের মানুষ।”
তিনি বলেন, “তারা চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্যই যায় বা অন্যান্য কাজে যায়, হাটবাজার করতে যায় … আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র তো আরও উন্মুক্ত হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এও বলা হচ্ছে যে, পদ্মা সেতু হয়েছেই ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়ার জন্য। অথচ এই পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। সেইসঙ্গে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনের গতিও বেড়েছে। এক সময়ের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার এই নৌপথ এখন মানুষের স্বস্তির জায়গা।
ঈদযাত্রায় মানুষের স্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে টোল আদায়ের নতুন রেকর্ডও হয় পদ্মাসেতুতে। সেতু বিভাগ জানিয়েছে, প্রায় দুই বছরে পদ্মাসেতু থেকে ১৫০০ কোটি টাকার বেশি টোল আদায় করা হয়েছে।
সুতরাং বিষয়গুলো যৌক্তিক বিবেচনায় লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই দেশ বিক্রির কথা বলছেন একদল লোক। তারা শুধু বিরোধিতার জন্যই এসব অভিযোগ তুলছেন। সত্যিকার অর্থে এ ধরনের ট্রানজিট দেওয়া বাংলাদেশের জন্য কিভাবে ক্ষতিকর তার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান ছাড়াই দেশ বিক্রির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ ধরনের অভিযোগ পাকিস্তান শাসন আমলে মুসলিম লীগ এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়েত ইসলাম ও জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপি শুরু করে।
এ ধরনের সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি দেশকে বিক্রি করেন না।
তিনি বলেন, আমি সব সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করে চলি। শেখ হাসিনা এ দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি।