ডেস্ক রিপোর্ট
আমাকে যেই রাতে জেলা ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়, ঐ দিন রাতেই আমার বাড়িতে সরকারি এজেন্টরা যায়। আমি তখন স্কুলে পড়ি, ছোট ছেলে। কোন মতে পেছনের রাস্তা দিয়ে হাটু পানি দিয়ে দৌড়ে জীবন রক্ষা করেছিলাম। এক মাসের বেশি সময় বাড়ি ফিরতে পারিনি। লুকিয়ে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে এবং কোন মতে মেট্রিক পরীক্ষায় লুকিয়ে অংশগ্রহণ করে শেষ করি।’-কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে এই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা মিছবাহুর রহমান। এই জেলার অসংখ্য প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী তাদের ওপর চলা অত্যাচার নির্যাতনের কথা জানান। https://1drv.ms/v/s!AlLkbJ9emTtpgfo1NduNERNtLCLwwQ?e=gYtXQA
মিছবাহুর রহমান আরও জানান, ৭৫ পরবর্তী সময়ে এই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতে ভয় পেতো। এই পরিচয় দেয়াও ছিলো এক ধরণের অপরাধ। তখন রাজনীতি করা এবং বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়া ভয়ের বিষয় ছিলো। https://1drv.ms/v/s!AlLkbJ9emTtpgfo1NduNERNtLCLwwQ?e=gYtXQA
শুধু আওয়ামী লীগ করার জন্য নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে লুটপাট চালানো হয় ও নির্যাতন করা হয় বলে জানান মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমেদ। সাবেক এই সংসদ সদস্য জানান, ৭৫ পরবর্তী সময়ে তো আমাদের পালিয়ে থাকতে হয়েছেই। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্তও অবর্ণনীয় নির্যাতন হয়েছে। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নির্যাতনের শিকার হন সংখ্যালঘুরাও। আমরা আমাদের সাধ্য মত সে সময় সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রকাশ্যে লুটপাট চালানো হয়েছে। খনু মিয়া নামক আওয়ামী লীগের এক নেতা ছিলো। তার ব্যবসা, বাড়ি, অর্থ সম্পদ সব দখল করে নেয়। পরিবার নিয়ে বাড়ির মেয়েদের মান-সম্মান রক্ষা করতে তাকে সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়। https://1drv.ms/v/s!AlLkbJ9emTtpgfo2PtO0FxL_yUsgsg?e=n7Eea2
এদিকে মৌলভীবাজার জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য বয়োজ্যৈষ্ঠ নেতা আব্দুল ওয়াহিদ জানান, ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই আমরা বাড়ি ছাড়া। বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর আমরা অন্ধকারে চলে গেলাম। সব সময় এখানে সেখানে ঘুড়ে বেড়াতে হয়েছে। তারপরও আওয়ামী লীগ করে গেছি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম দেখা হলে মাথায় হাত দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ করতে থাকো’। তখন থেকেই করে যাচ্ছি। https://1drv.ms/v/s!AlLkbJ9emTtpgfozej6qwTX5yw0Bsw?e=XlsQbc
‘আমরা সৌভাগ্যবান যে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরেছিলেন’- ৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন ও অত্যাচারের কথা স্মরণ করে কথাগুলো বলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক রফিকুর রহমান। কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এমনকি যারা কট্টর সমর্থক ছিলো, তাদের সকলে আতঙ্কের মধ্যে থেকেছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। আত্মগোপনে আমি ও আমার সঙ্গে অনেকেই ছিলো।’ তবে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফেররা পর নেতাকর্মীরা এই দীর্ঘ নির্যাতনের স্মৃতি ভুলে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। এ প্রসঙ্গে এই বয়োজ্যৈষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) যদি সেইদিন দেশে না আসতেন। তাহলে এই আওয়ামী লীগকে আমরা দেখতে পারতাম না। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের আসার কারণেই আওয়ামী লীগ ঘুরে দাড়িয়েছিলো। https://1drv.ms/v/s!AlLkbJ9emTtpgfo0QMJWNQ5RNDTw8g?e=feh38p
বিএনপি নেতাকর্মিদের অস্ত্রের আঘাতে নিহত মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মানিক মিয়ার সন্তান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছালেক মিয়া জানান ৭৫ সালের পর তাদের ব্যবসা থেকে শুরু করে জমি ও অর্থ সম্পদ লুট করে নেয়ার কথা। তিনি বলেন, অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমরা আওয়ামী লীগ করি। এলাকার সংখ্যালঘুদের পাশে সর্বদা আমার বাবা ছিলো, আমাদের পরিবার ছিলো। এখনও আমরা সেই আওয়ামী লীগ করে যাচ্ছি। https://1drv.ms/v/s!AlLkbJ9emTtpgfo4Q7uKK5fSqY3HBQ?e=rP4HZ0