গোপাল হালদার, রিপোর্টার
দুমকি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুলোতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসান (মেহেদী মিজান) এর পক্ষ থেকে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ইট বীনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। বিতরণ করা এসব ইট ব্যবহার না করে পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন মসজিদের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এটিকে নির্বাচনীর প্রচারনার একটি কৌশল হিসেবে দেখছে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী ও সাধারণ ভোটাররা। এ নিয়ে রিটানিং অফিসার সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের অংশ হিসেবে ৩য় ধাপে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ মেহেদী হাসান (মেহেদী মিজান) নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে উপজেলার প্রায় ৩৫০ টি মসজিদ মাদ্রাসা ও ১২ টি মন্দিরে মোঃ মেহেদী হাসান (মেহেদী মিজান) এর ‘পায়রা ব্রিকস’ এর ইট পাঠিয়েছে। মসজিদের আয়তন ও মুসুল্লি (ভোটার) বিবেচনা করে দুই থেকে চার হাজার ইট দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দুমকি উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, দুমকির আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের সাতানি হাওলাদার বাড়ি জামে মসজিদে ২ হাজার, পশ্চিম ঝাটরা এলাকার মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদে ২ হাজার, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের মৃধা বাড়ির ঈদ’গা মাঠে ৩ হাজার, তালুকদার বাজার মসজিদে ২ হাজার, মুরাদিয়া ইউনিয়নের আকন বাড়ী বায়তুন নুর জামে মসজিদে ৩ হাজার, লেবুখালী ইউনিয়নের হাওলাদার বাড়ি মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদে ২ হাজার, পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের গৌরগোবিন্দ সেবাশ্রম মন্দিরে ৩ হাজার ও মোল্লা বাড়ি জামে মসজিদে ২ হাজার (পায়রা ব্রিকস) এর ইট পাঠিয়েছে। এভাবেই পুরো উপজেলার অধিকাংশ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে একই ব্রান্ডের ইট গুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
ইতিমধ্যে এই বিষয় রিটার্নিং অফিসার বরাবর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মেহেদী হাসান মিজানের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রভাবিত করা ও আচারন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন মোঃ রাব্বিকুল ইসলাম নামে এক যুবক অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচারন বিধি লঙ্গন করে উপজেলাধীন মসজিদ ও মন্দিরসমূহ এবং কিছু কিছু বাড়ির। সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মেহেদী হাসান মিজানের মালিকানাধীন পায়রা অটো ব্রিকস এর ইট বিনামূল্যে অনুদান হিসাবে দিচ্ছেন। তাঁর এ ধরনের কর্মকান্ড নির্বাচনী আচারন বিধির ১৭(গ) ও ২০ এব সুস্পষ্ট লংঘন।
এ বিষয়ে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বেল্লাল মোল্লা বলেন ‘এই মোল্লা বাড়ির মসজিদটা আমাগো ফুফাতো ভাই কইরা দেছে, তার নিজের টাকায়। মসজিদ পুরা কমপ্লিট এহন নির্বাচন আইছে এহন একছের প্রার্থীরা আয়। এক প্রার্থী আইছে.. নাম যেনো কি? মেহেদী মিজান মনে হয়। আইয়া নামাজ পইরা কয় আমি আমনেগো মসজিদে কিছু ইট দিমু। মসজিদের কাজ তো শেষ, টয়লেট বানাইতে লাগবে আনে।’
পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত গৌরগোবিন্দ সেবাশ্রম মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা নিমাই গোলাদেরের পুত্র শিপু গোলদার বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে গিফট হিসেবে মেহেদী মিজান ভাই এই ইট গুলা মন্দিরে পাঠাইছে। এখানে তো বহু ভক্তের সমাগম হয় তাই ভাই কইছে ইট গুলা দিয়া সামনের জায়গাডা পাকা কইরেন।’
তবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোতে ইট বিতরণ করার বিষয় জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মেহেদী হাসান (মেহেদী মিজান) বলেন, ‘আমি সহ পায়লা ব্রীকস্ এর মালিক তিনজন। আমি এটির চেয়ারম্যান তার মানে এটি আমার একার মালিকানাধীন কোন প্রতিষ্ঠান নয়। সারা বছরই আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সহায়তা করে থাকি। এরই অংশ হিসেবে এবারও বিভিন্ন মসজিদ মন্দিরে ইট দেয়া হয়েছে। এটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিতরণ করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরে কোন ইট বিতরন করা হয়নি। আশা করছি নির্বাচন শেষ হলেও আমাদের এই সহযোগীতা চলমান থাকবে।’
এ বিষয় দুমকি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা ও অথিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) যাদব সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয় আমি কোন অভিযোগ পাইনি। আপনি যেহেতু বলেছেন আমরা খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয় প্রয়োজনীয় আইনগত পদেক্ষেপ গ্রহন করবো।’