৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত রেজাল্টে আমি নিচের দিক থেকে রেজাল্ট খুজছিলাম৷ কয়েকবার খুঁজে পাইনি। তখন ভাবলাম বোধহয় হয়নি। একটু পর আমার হ্যাসবেন্ড রিয়াজ ফোন করে বলল, তুমি প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছো। আমি কিছুটা হতভম্ব হয়ে আবার প্রশাসন ক্যাডারের তালিকায় রেজাল্ট খুজতে গিয়ে আমার হাত কাঁপছিল। দেখলাম আমার রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা চকচক করছে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করালম। একটু পর মাকে গিয়ে বললাম, আমি প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছি মা ৷ মা কেঁদে ফেললেন। আমাকে আদর করলেন।
আমার মা আর হ্যাসবেন্ডের খুশি দেখে আমার মন ভরে গেছে। এই খুশি টাকা দিয়ে কেনা যায়না। এইভাবেই ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত ইনসানা ইকো নিজের অনুভুতি ব্যক্ত করছিলেন।
ইনসানা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ তারেক শামসুর রেহমান তার শিক্ষক ছিলেন।
মাস্টার্স শেষ হবার পর তার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু পড়াশোনা থেমে থাকেনি। স্বামী সৈয়দ রিয়াজ ও মা সালেহা বেগম সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। পাশে থেকেছেন। ইনাসানা বলেন, বিয়ের পর আমার স্বামী এবং আমার মায়ের সহযোগিতা আমার মনোবল বৃদ্ধি করেছে। তারা সবসময় চেয়েছে আমি যেনো কিছু একটা করি। ক্যাম্পাস লাইফে আমি ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতাম। এতে করে যারা সিরিয়াস পড়াশোনা করত তাদের কয়েকজনের সাথেও পরিচয় ঘটল। লাইব্রেরিতে অনেক বড় ভাইয়া আপুর সাথেও কথা হত। সেখান থেকেই বিসিএসের প্রতি ভাললাগা।
কীভাবে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে গুছিয়ে নিবে চাকরির বাজারে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চাকরির পড়াশোনার জন্য ধৈর্যটাকে ধরে রাখতে হবে। আর যে চাকরির পরীক্ষা দিতে হবে সেটার সিলেবাস বুঝে ও বিগত প্রশ্ন ধরে ধরে বিশ্লেষণ করে নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে।
লিখিত পরীক্ষার খাতা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে ৷ ডাটা, ম্যাপ, চার্ট, উক্তি দিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে লিখতে হবে। গোছালো প্রস্তুতি নিলে অনেকের চেয়ে একটু এগিয়ে থাকা যাবে। লিখিত পরীক্ষার ব্যাপারে এমনটাই বলছিলেন ইনসানা।
ভাইভার ব্যাপারে তিনি বলেন, ভাইভাতে খুব সাবলীল থাকতে হবে। নিজেকে কৃত্রিমভাবে জাহির করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই সেটা ইনিয়ে বিনিয়ে বানিয়ে বলার চেষ্টা না করে সোজাসাপ্টা সরি বলে দিতে হবে।
এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেই ইনসানা এপ্লাস পেয়েছিলেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে।
পড়ালেখার পাশাপাশি মানবিক কাজে ইনসানা সবসময় এগিয়ে থেকেছেন। শেষমেশ পরিশ্রম আর ধৈর্যই ইনসানাকে পৌছে দিয়েছে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের ঠিকানায়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মো. গোলাম মোস্তফা