সোহাগ হাওলাদার, সাভার,ঢাকা
আজ ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাভারে সকাল থেকে চলছে ভোট গ্রহণ।কেন্দ্রে ভোটার না আসায় অলস সময় পার করছে নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ,কর্মচারীরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা । প্রার্থীদের সমর্থক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা গেলেও ভোটার খুঁজে পাওয়া যায় নি। কোন কেন্দ্রে দেখা যায়নি ভোটারদের লাইনে দাড়িয়ে থাকার চিত্র। এদিকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় যথাযথ প্রচার প্রচারণাও চালায়নি সাভার উপজেলা নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা । ফলে অনেক ভোটার জানেই না আজকের ভোটের খবর।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল ৮ থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত আশুলিয়ার পলাশবাড়ী হাজী জয়নুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ,সুইডেন বাংলাদেশ ক্রিয়েটিভ স্কুল,হাজী মতিউর রহমান স্কুল,গাজিরচট আলিয়া মাদ্রাসা সহ বেশ কিছু কেন্দ্র গুলো ঘুরে দেখা যায় ভোটারশূণ্য। এসব কেন্দ্রের কোনটিতেই ভোটারদের কোন লাইন দেখা যায়নি।
সকাল ১০ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আশুলিয়ার আমার স্কুল ভোট কেন্দ্রে কোন ভোটারই আসেন নি, হাজী জয়নুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে সকাল ১০ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ভোট পরেছে ২ টি ও দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সাভার বিপিএটিসি ভোট কেন্দ্রে ভোট পরেছে মাত্র ১০ টি। এছাড়া আশুলিয়ার আলিয়া মাদ্রাসার মহিলা কেন্দ্রে তিন ঘন্টায় অর্থাৎ সকাল ১২ টা পর্যন্ত ভোট পরেছে ২ টি। পর্যবেক্ষণ করা সকল ভোট কেন্দ্রের অবস্থা সকাল ১২ টা পর্যন্ত প্রাই একইরকম লক্ষ্য করা গেছে।
জানা যায়, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সাভার উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন মঞ্জুরুল আলম রাজীব। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায়
আমেজ ছিল না নির্বাচনী মাঠে। ভাইস চেয়ারম্যানদের নির্বাচনী প্রচারনা তেমন না থাকায় ভোটাররা জানেন না নির্বাচনের খবর। প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার, লিফলেট ও মাইকিং করে ভোট চাওয়ার চিরাচরিত নিয়ম তেমন ছিল না বললেই চলে। মহাসড়ক ও সড়কের পাশে জনসংযোগ করলে বাড়ি বাড়ি যায়নি কোন ভাইস-চেয়ারম্যান প্রার্থী। আর এতেই নির্বাচনের আমেজ পৌঁছায়নি ভোটারের ঘরে ঘরে ।
স্থানীয় ভোটার মুদী দোকানদার আলী বলেন, আজ যে নির্বাচন হচ্ছে এটা ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি বললেন তাই মনে পড়ে গেলো। এই নির্বাচনের খবর অনেকেই জানেন না। আমার অনেক ক্রেতারাও নির্বাচনের খবর জানেন না। এরপর বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হয়।
তানিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, আমরা সারা দিন কারখানায় কাজ করি। কোন প্রার্থী কারখানাতেও যায়নি, বাসাতেও আসেনি। কোথাও কোন পোস্টারও দেখি নি। কবে নির্বাচন এটাও তো জানি না। আগের নির্বাচনে মাইকিং শুনতাম এবার তো তাও শুনলাম না।
পোশাক শ্রমিক সাকিব মিয়া বলেন, আজ নির্বাচন হচ্ছে তা সকালেই জেনেছি, আগে শুনিনি। প্রস্তুতি না থাকায় ভোট দিতে যাই নি। আর কোন প্রার্থী তো আসে নি ভোট চাইতে। কাকে ভোট দেবো, প্রার্থীদের চিনিও না ঠিকঠাকমত। এমন নির্বাচন এই প্রথম দেখলাম। নির্বাচন মানে উৎসব। কিন্তু যাদের নিয়ে এই উৎসব তারাই জানে না ভোট উৎসবের কথা।
কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, প্রথম চার ঘন্টায় ভোটারদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাননি তারা। ভোটার সংখ্যা কম থাকায় অনেকটা অলস সময় পার করছেন কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্টসহ অন্যান্যরা।
ডেন্ডাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার ওসমান গণি বলেন, এই কেন্দ্রে সকাল ১০ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ভোটার শুণ্য রয়েছে। এই কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২০২৫। কিন্তু সোয়া তিন ঘন্টা অতিবাহিত হলেও কোন ভোটারই আসেন নি।
সাভার উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯ লক্ষ ৯১৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪ লক্ষ ৬২ হাজার ২১২ ও নারী ভোটার ৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ৬৬৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১৫ জন। ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সাভার উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়াম্যান পদে প্রতিন্দ্বন্দী প্রার্থীরা হলেন- ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন, আশুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ খান ও ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুল ইসলাম। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসমিন আক্তার সুমী ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি মনিকা হাসান ও অধ্যক্ষ নাদিয়া নুর তনু। যদিও পিতা মারা যাওয়ার পর ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এদের মধ্যে কাউকেই জনসংযোগ করতে দেখা যায় নি।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রাহুল চন্দ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বলেন, সাভারে যে পরিমান ভোটার সেঅনুযায়ি উপস্থিত একেবারে কম। চেয়ারম্যান প্রার্থী না থাকা ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রচারণায় ঘাটতি থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আজ নির্বাচন জানে না অনেক ভোটার এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আসলে সাভারের সব কিছু নির্বাচনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। ভোটাররা জানলেও আগ্রহ কম রয়েছে। সময়ের সাথে বাড়তে পারে।