হট নিউজ ডিজিটাল ডেস্ক
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানতের পরিমাণ গত এক বছরে প্রায় ৬৭% কমেছে। ২০২২ সালে যেখানে এই পরিমাণ ছিল ৫.৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ, ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৮ কোটি ফ্রাঁতে।
মূল বিষয়সমূহ:
১. ক্রমাগত হ্রাসের ধারা: গত কয়েক বছর ধরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত কমছে। ২০২১ সালে সর্বোচ্চ ৮৭.১১ কোটি ফ্রাঁ থেকে ২০২২ সালে তা ৫.৫ কোটি ফ্রাঁতে নেমে আসে।
২. আঞ্চলিক প্রবণতা: শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী ভারতেরও একই অবস্থা। ২০২৩ সালে ভারতীয়দের আমানত ৭০% কমে ১.০৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে নেমে এসেছে।
৩. বৈশ্বিক চিত্র: সুইস ব্যাংকে সর্বাধিক আমানত রয়েছে যুক্তরাজ্য (২৫৪ বিলিয়ন ফ্রাঁ), যুক্তরাষ্ট্র (৭১ বিলিয়ন ফ্রাঁ) এবং ফ্রান্সের (৬৪ বিলিয়ন ফ্রাঁ) নাগরিকদের।
৪. সম্ভাব্য কারণ: বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুইস ব্যাংকিং সিস্টেমের গোপনীয়তা নীতি নিয়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক চাপ, কর ফাঁকি রোধে কঠোর নীতিমালা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এর পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
৫. সীমাবদ্ধতা: এসএনবির তথ্যে শুধুমাত্র ব্যাংক আমানতের হিসাব রয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের অন্যান্য সম্পদ যেমন রিয়েল এস্টেট বা শেয়ার বিনিয়োগের হিসাব এতে নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন, জানিয়েছেন, “সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানত হ্রাসের এই ধারা অবশ্যই ইতিবাচক। এটি প্রমাণ করে যে, দেশের অর্থনীতি ক্রমশ স্বচ্ছ হচ্ছে এবং বৈধ পথে অর্থ লেনদেনের প্রবণতা বাড়ছে।”
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক মন্তব্য করেছেন, “যদিও এই পরিসংখ্যান ইতিবাচক মনে হচ্ছে, তবুও এটি নিশ্চিত নয় যে অবৈধ অর্থ প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছে। বরং এটি অন্য দেশের ব্যাংকে বা অন্য মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে।”
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের আমানত হ্রাসের এই ধারা দেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও নীতি নির্ধারকরা সতর্ক নজর রাখছেন। তবে এটি স্পষ্ট যে, আন্তর্জাতিক আর্থিক স্বচ্ছতার দিকে বিশ্ব অগ্রসর হচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।