বিপ্লব ইসলাম, লংগদু, রাঙ্গামাটি
ভূমি বিরোধের কারণে ১৯৮৫ সাল থেকে তিন পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ভূমি বন্দোবস্তি বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে অসাধু চক্রের রোষানলে চলছে ভুয়া কাগজপত্রের ছড়াছড়ি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন ২০১০ সালের পর থেকেই রাঙ্গামাটিতে এই প্রবণতা বেড়েই চলছে। তার মধ্যে সবচেয়ে ভুয়া বন্দোবস্তি লংগদু উপজেলার আটারকছড়া মৌজায়। বন বিভাগের তথ্য মতে আটারকছড়া এলাকায় রিজার্ভের ৫০ একর জমি স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের দখলে রয়েছে।
এছাড়াও বন কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উপজেলার সংঘবদ্ধ গাছ চোররা প্রতিনিয়ত বন থেকে গাছ চুরি করছে। ফলে ধবংস হচ্ছে বনাঞ্চল তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে।
অপরদিকে সংরক্ষিত বনের লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের আলুটিলা এলাকায় প্রভাবশালী নেতা নুরু জমাদ্দার,তার তিন ছেলে আওয়ামী যুবলীগ নেতা খলিল জমাদ্দার ও জসিম জমাদ্দারের নামে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের উল্টাছড়ি রেঞ্জের ২৭ নং মৌজার প্রায় অর্ধশত একর জমি জবরদখল করে রেখেছেন।
বনবিভাগ ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, তৎকালীন সময়ে আটারকছড়ার রফিজ উদ্দিন জমাদ্দারের ছেলে নুরু মিয়া জমাদ্দারের নামে এক ব্যক্তি বন বিভাগের জমি কার্টিজ মুলে ক্রয় করে জমি দখল করেছেন। শুধু তিনি একাই নন, তার ছেলে জসিম জমাদ্দার, খলিল জমাদ্দার ও জলিল জমাদ্দার প্রভাব খাটিয়ে বন বিভাগের জমি এভাবে দখল করে নিচ্ছে।
কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বসতি নির্মাণ করে বনের জমিকে নিজের বলে দাবি করে থাকে। বন বিভাগের জায়গা দখল করে ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে অন্যের কাছে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার দখলদাররা আইনি ঝামেলা এড়াতে কৌশলে জমি খোলা স্ট্যাম্পে বিক্রি করে দেন। তাদের উচ্ছেদ অভিযানও করতে পারেনি বনবিভাগ।
তবে দখলদার নুরু মিয়া জমাদ্দার ও তার ছেলে খলিল জমাদ্দার দাবি করেন, সংরক্ষিত বনের বাইরে ৪ ও ৬ ধারার জমি সিএস পর্চামূলে তারাই মালিক। এসএ ও আরএ সে উক্ত জমির মালিক বনবিভাগ। তাদের এসব জমির সকল কাগজপত্র রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন ১৯৯৪ সালে বন বিভাগ এখানে বাগান করেছে এবং এই বাগানে আমরা কাজও করেছি। ২০১০ সালে এসে শুনি এসব জায়গা সব নুরু মিয়া জমাদ্দার ও তার তিন ছেলের নামে। তৎকালীন বন বিভাগের কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে এবং দলীয় প্রভাব বিস্তার করে জালিয়াতি কাগজপত্র করে সরকারি এ বনভূমি তারা দখলে নিয়েছে।
তারা আরও বলেন, বন বিভাগের এ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলতে গেলেই হামলা মামলা দিয়ে আমাদের হেনস্তা করছে । এসব জাল জালিয়াতির সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচারের দাবি জানায় এলাকাবাসী।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অজয় মিত্র চাকমা বলেন, এটা অনেক পুরনো অভিযোগ। আমি যতদূর জানি দখলকৃত ৫০ একর জমির পাশে ৪-৫ একর জমি তারা ক্রয় করে নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে পুরো জমি দখলে নিয়ে নেয়। সেখানে যে বসতি ছিল সেগুলোও তারা উচ্ছেদ করে দেয় বিভিন্নভাবে। তবে এসবের একটা চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের দাবি।
বনবিভাগের উল্টাছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুবুুল আলম বলেন, অতীতে কোন অফিসার কিভাবে দেখেছে জানিনা। যেহেতু জায়গা গুলো বনবিভাগের সে হিসেবে আমরা বনবিভাগের পক্ষ হতে মামলা করে রিজার্ভের জায়গা উদ্ধার করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কফিল উদ্দীন বলেন, আটারকছড়া ইউনিয়নে বনবিভাগের জায়গা দখলের বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এরই মধ্যে একটি তদন্ত টিম গঠন করেছি। শীঘ্রই আমরা জমি উদ্ধারের ব্যবস্থা করবো।