শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পর স্তমিত হয়ে যাওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ফের উসকে দিতে মাঠে নেমেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক ও আইনজীবীরা। সহিংসতাকে ছড়িয়ে দিতে সরাসরি মাঠে নেমেছেন তারা।
কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক এরইমধ্যে তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এছাড়া বরিশাল, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে কোটার আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপরও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আবারও পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বর্তমানে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা তিন সমন্বয়ক। তারা সরকারের মন্ত্রীদের পদত্যাগসহ নয় দফা আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে যার নাম দিয়েছে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। এদিকে বিএনপিও তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
আজ বুধবার ওই তিন সমন্বয়ক ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামের একটি কর্মসূচির ডাক দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আদালতের সামনে হাজির হবার আহ্বান জানালেও সেখানে কিন্তু চিত্র পুরোটাই ছিল উল্টো। বরং আদালত ছিল বিএনপি-জামায়াতের আইনজীবীদের দখলে। এই কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত না হলেও ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির সমর্থনে ঢাকার নিম্ন আদালতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। চট্টগ্রামেও আদালতে শিক্ষার্থীদের সমর্থনের নামে মাঠে দেখা গেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে কেনো আন্দোলন করা হচ্ছে? বিএনপি কেনো তার নিজ ব্যানারে আন্দোলনে নামছে না?
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়কের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ র্যালি ও সংহতি সমাবেশ হয়েছে। সেখানেও দেখা যায় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের। এই র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের শীর্ষ নেতা শাবির সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, জামাতের নেতা সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ইসমাঈল, জামায়াতপন্থী শিক্ষক ইংরেজি বিভাগের আতিকুল ইসলাম। এই র্যালির ভিডিও লাইভ করে বিএনপি তারা অফিসিয়াল ফেসবুক থেকে।
এ ছাড়াও এই র্যালিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির আমলে দুইবার প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক ড. মো .গোলাম আলী হায়দার চৌধুরী, ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) শাবি শাখার সভাপতি শাবির গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম, শাবির বিবিএ বিভাগের অধ্যাপক রাজিক মিয়া (জাহাঙ্গীর নগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা), শাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. জাকারিয়া ইসলাম (বিএনপি প্যানেলের শিক্ষক) এবং একই বিভাগের বিএনপিপন্থী শিক্ষক সুমন।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের একদফা দাবিতে এ মাসের শুরু থেকে দেশজুড়ে আন্দোলন চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় কোটা সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানালেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যের ভুল ব্যাখা দিয়ে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কানি প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের ঢাল বানিয়ে শুরু হয় দেশজুড়ে তাণ্ডব। গত ১৫-১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকে তৎপরতা চালিয়ে সংঘর্ষ সৃষ্টির সুফল পাবার পর ১৭ তারিখ থেকে বিএনপির চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ১৮ তারিখ থেকেই ছাত্রদল সরাসরি এই আন্দোলনের প্রতিটি ইউনিটে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বহিরগতদের প্রবেশের সুযোগ করে দেয় পরিকল্পিতভাবে। এ ছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেয়া সমন্বয়করা নাশকতায় জড়িত না থাকার কথা বললে এবং তাদের দাবি পূরণের পর অন্যান্য দাবি নিয়ে আলোচনায় বসার বিষয়ে আলোচনা করলে তাদের হত্যার হুমকিও প্রদান করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে। আলোচনায় বসলে হত্যার হুমকি প্রদান করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস প্রদান করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মোল্লা আজাদ।