মোঃ সোহাগ হাওলাদার, সাভার, ঢাকা
পৃথিবীতে যখন করোনা মহামারির সময় জার্মানিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়ে সাবরিনা কামাল তন্বী নামের এক নারী মৃত্যুবরণ করেন ।
তার চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত টাকা অন্য কোথাও ব্যবহার না করে গরীবের চিকিৎসায় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। সেজন্য গরীবের চিকিৎসালয় ক্ষ্যত সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫ শয্যা বিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালুর করতে পরিবারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেন।
অনুদান গ্রহণ করা হলেও হাসপাতালে চালু হয়নি কোন আইসিইউ। পরে আছে শুধু ৫টি শয্যা আর কিছু সরঞ্জাম। বর্তমানে হাসপাতালে আইসিইউর চাহিদা থাকলে নানান কারণে চালু করা যাচ্ছে না বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, “সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র” নামে আইসিইউ কেন্দ্র নামকরণের শর্তে ৫০ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। সকল ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে “সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র” উদ্বোধনও করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রটি। হিসাব নেই অনুদানের ৫০ লাখ টাকার। কোথায় কিভাবে খরচ হয়েছে অনুদানের টাকা তার হিসাব নেই কৃর্তপক্ষের কাছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র” স্থাপনের জন্য তন্বীর মা নাসরীন বেগম ‘এবি’ ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ২ টি চেকে ২৫ লাখ করে মোট ৫০ লাখ টাকা প্রদান করেন। তৎকালীন সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান সমন্বয়ক মঞ্জুর কাদির ওই ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে “সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র” স্থাপনে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পরে একই বছরের ২৯ অক্টোবর আইসিইউ কেন্দ্রটি উদ্বোধনও করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে একজন রোগীকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। কারণ সেখানে নাম ছাড়া আসলে আইসিইউ এর কোন অস্তিত্বই নেই।
শনিবার (৮ জুন) সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র” নামে একটি কক্ষ রয়েছে। কিন্তু ওই নামে শুধু কক্ষটিই রয়েছে। নেই কোন কার্যক্রম, নেই কোন চিকিৎসক কিংবা যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর। দুটি কার্ডিয়াক মনিটরও দেখা গেলেও পুরো আইসিইউতে রাখা হয়েছে কেমিকেলের কেমিক্যাল ড্রাম। কেন্দ্রটিতে ইন্ট্রাভেনাস লাইনের একটি ওয়েব, ফিডিং টিউবসহ নানা যন্ত্রপাতি থাকার কথা থাকলেও কিছুই নেই সেখানে। তাহলে অনুদানের ৫০ লাখ টাকা গেলো কোথায়?।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, ডা. মঞ্জুর কাদির যখন প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন তখন তিনি খেয়াল খুশি মতো কাজ করতেন। যেখানে আইসিইউ এর জন্য অনুদান প্রদান করা হয়েছে সেখানে তিনি কি করেছেন উনি নিজেই জানেন। আইসিইউ সাভার গণস্বাস্থ্যে কখনও ছিল না এখনও নেই। তবে “সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র” নামের একটি কক্ষ রয়েছে।
অনুদানের টাকা আসলে কি করা হয়েছে তার অনুসন্ধান করতে গিয়ে কোন নথি খোঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া হিসাব শাখা থেকে ডা. মঞ্জুর কাদিরের রিসিভ করা এবি ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ২ টি চেকের মোট ৫০ লাখ টাকার চেকের ফটোকপি ও চুক্তিনামা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। খরচের কোন ধরনের ক্যাশমেমো কিংবা খরচের কোন হিসাবে তাদের কাছে নেই বলে জানান হিসাব কর্মকর্তা।
সাভার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, ওই সময় ডা. মঞ্জুর কাদির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। এটার সব কিছু তিনিই করেছেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী একটা হিসাব থাকার কথা থাকলেও তা আসলে নেই। হিসাব না থাকলে টাকা তো খরচ করা হয় নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা অবশ্য ঠিক। এই টাকা আসলে তৎকালীন কর্মকর্তা কি করেছেন সেটা তিনি ভাল বলতে পারবেন।
সাবরিনা কামাল তন্বীর মা ছিলেন ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। তার নাম অধ্যাপক নাসরিন বেগম। সেসময় তিনি বলেছিলেন , ২০১৯ সালে মে মাসে জার্মানিতে পিএইডি করার সময় মেয়ে সাবরিনা কামাল তন্বী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। সেসময় যে টাকায় মেয়ের চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছিল, সে টাকা দিয়ে গরিব মানুষের চিকিৎসার জন্য খরচ করা হবে বলে চিন্তা করেন তিনি। সে ভাবনা থেকেই গণস্বাস্থ্যের সাথে যোগাযোগ করে হাসপাতালে আইসিইউ নেই বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তাই সেখানে আইসিইউ স্থাপনের জন্য ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। সম্প্রতি তার বক্তব্যের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ব্যবহৃত ফোন নাম্বারটি দিতে অস্বীকৃতি জানান গণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তাব্যক্তিরা।
এব্যাপারে ডা. মঞ্জুর কাদির আহম্মেদ বলেন, আমি শুধু সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলাম। পরবর্তীতে কি হয়েছে টাকা কি হলো সে বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি জানি সম্পূর্ণ টাকা ডায়ালাইসিস সেন্টারে আইসিউ স্থাপনের জন্য অনুদান এসেছিল। সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল। আমি ২০২৩ সালে কক্সবাজারে দায়িত্ব নিয়ে চলে এসেছি। পরে কি হয়েছে আমার জানা নেই।
তিনি থাকা অবস্থায় কেন রোগী ভর্তি করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি