সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত বুলিং ও র্যাগিং নিয়ন্ত্রণে জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। রোববার (১৯ মে) জারি করা এই জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বুলিং ও র্যাগিংয়ের শিকার হলে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে অভিযোগ জমা দেয়া বিষয়ক নির্দেশনা সহ শাস্তি ও প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত ‘নং সংস্থা/ব-২৩/রে-৮২৫২ (২০০০)’ জরুরি বিজ্ঞপ্তির কপি সকল শিক্ষক, বিভাগীয় প্রধান ও দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নোটিশ বোর্ডে প্রদান করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘বাংলাদেশ গেজেট, জুন ২৯, ২০২৩’ এ প্রকাশিত নীতিমালা ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ অনুসারে মৌখিকভাবে, শারীরিকভাবে, সামাজিকভাবে, সাইবার মাধ্যমে, সেক্সুয়ালভাবে বুলিং ও র্যাগিং করার মাধ্যমে অসম্মান, অপমান ও মানহানি, শারীরিক অথবা মানসিক যাতনা সৃষ্টি করা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন মোতাবেক তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উপরোক্ত সকল অপরাধের অভিযোগ ইনস্টিটিউশনাল ইমেইল আইডি থেকে ‘rbc_buet@buet.ac.bd’ প্রেরণ করার জন্য জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এ ছাড়াও রেজিস্ট্রার অফিসে সংরক্ষিত বুলিং ও র্যাগিং সংক্রান্ত অভিযোগ বাক্সে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করা যাবে বলে জানানো হয়। তবে সেটি উপযুক্ত প্রমাণসহ সকল অভিযোগ অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী ব্যক্তির গোপনীয়তা রক্ষার জন্য অভিযোগকারীর স্বাক্ষর (প্রতি পৃষ্ঠায়) এবং বুয়েটের ইনস্টিটিউশনাল আইডি সহ গোপনীয় খামে লিখিতভাবে দাখিল করতে হবে।
সমষ্টিগতভাবে অভিযোগের জন্যও এখানে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলগতভাবে লিখিত অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে সকল অভিযোগকারীর সকল পৃষ্ঠায় পৃথক স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। ইমেইযোগে দলগতভাবে অভিযোগ প্রেরণের ক্ষেত্রে সকল অভিযোগকারীকে নিজ নিজ ইনস্টিটিউশনাল ইমেইল আইডি ব্যবহার করে পৃথক অভিযোগ দাখিল করতে হবে। সকল অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযোগকারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রমাণাসি উপস্থাপন বাঞ্ছনীয়। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিকারের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট জাতীয় হটলাইন (৯৯৯) এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
তবে অভিযোগ প্রদান ও তদন্তকালে প্রকাশ্যে মৌখিকভাবে, লিখিতভাবে, সংবাদমাধ্যমে অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযুক্ত, অভিযোগের বিষয়বস্তু অথবা অভিযোগের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য প্রচার করা যাবে না বলে জানানো হয় এবং এই প্রচার প্রকারন্তরে সাইবার বুলিং অথবা মৌখিক ও সামাজিক বুলিং হিসেবে গণ্য হবে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে যারা বিষয়টি প্রচার করবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
একই সঙ্গে মিথ্যা অভিযোগ প্রদান/দাখিল ও মিথ্যা তথ্য উপাত্ত হাজির করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বিভ্রান্ত করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলেও জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এর ব্যত্যয় ঘটলে প্রচলিত আইন/বিধি, প্রযোজ্যক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বুয়েট প্রশাসন।
এর আগে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে তাদের ওপর হওয়া র্যাগিং ও বুলিং এর লিখিত অভিযোগ জমা দেয় বুয়েটের উপাচার্যর কাছে। এ ছাড়াও নিজেদের নিরাপত্তার হুমকির কথা জানিয়ে বুয়েটের উপাচার্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও চিঠি প্রদান করেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। টাঙ্গুয়ার হাওরে শিবির কর্মীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধনের জন্য বুয়েটে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে বুলিং করা হয় হলে ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এ ছাড়াও ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের ইফতার বিতরণ করায়ও বুলিং এর শিকার হন শিক্ষার্থীরা। তাদেরকে একাডেমিক সকল কার্যক্রম থেকে অবাঞ্চিত করা এবং কোন শিক্ষার্থী এই শিক্ষার্থীদের সহায়তা করলে তাদেরও একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত করার হুমকি প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে বুয়েট প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ প্রদান করলেও এখনও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।