পাকিস্তান আর বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ নেই। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানেও এখন ৩৫+ করা হয়েছে। ১৯৯১সালে ২৭থেকে ৩০ করা হয় বাংলাদেশর তখনকার গড় আয়ু বিবেচনা করে। তখনো শতকরা তিন শতাংশ মানুষ বিরোধিতা করেছিল। ৩৩বছর পর গড় আয়ু বাড়লেও কেনো বয়সসীমা কেনো বাড়বে না? কেনো শুধু দুই বছর অবসরের বয়স বাড়ল? পাকিস্তানের সাথে যদি শুধু এই একটা বিষয় নিয়ে মিল রাখি, তাহলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ কোথায়? ২০১৮সালে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে(পৃষ্ঠা নং ৩৩) ওয়াদা করা হল বয়সসীমা বাড়ানো হবে। সেটা কত দিন পর বাস্তবায়ন হবে? শিক্ষার্থী আর কতদিন রাস্তায় পড়ে থাকবে?
বয়স চুরি করা বা কমিয়ে দেবার সংস্কৃতি বন্ধের জন্যও কি দরকার নাই বয়সসীমা বৃদ্ধির? দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন জট কবে বন্ধ হবে? কেনো বয়সীমা বৃদ্ধি নিয়ে ১২ বছর ধরে আন্দোলন চলবে? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
এদেশে আন্দোলন ছাড়া কি কোনো ইতিহাস আছে?
পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়ি রক্ষা করতে হবে আন্দোলন কর!
রাজশাহীতে সোনা দীঘী পুকুরটা রক্ষা করতে হবে আন্দোলন কর!
কোটা সংস্কার করতে হবে আন্দোলন কর!
প্রাইমারি স্কুল সরকারি করতে হবে — আন্দোলন কর!
ফার্মগেটে আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা করতে হবে আন্দোলন কর!
স্কুলের শিক্ষকদের বেতনে চলছে না বেতন বাড়ানোর আন্দোলন কর!
ধর্ষণের বিচার পাওয়ার জন্য আন্দোলন কর!
হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য আন্দোলন কর!
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জনের ৭২ বছরে বাংলাদেশ আন্দোলন ছাড়া কোনো ইতিহাস নেই।
এবার প্রশ্ন দেশের মাস্টার্স পাশ ছেলে মেয়ে কেনো রাত দিন অনশন করবে বয়স বৃদ্ধির জন্য? কবে বোধহয় হবে আমাদের? এটা কি সভ্য সমাজ কত দিন চেয়ে চেয়ে দেখবে?
শোনা যাচ্ছে, আমলারা চাকরিতে বয়সসীমা বৃদ্ধি নিয়ে আগে রাজি ছিলেন না। এখন বলছেন এটা সরকারি সিদ্ধান্ত।
মনে রাখতে হবে, আমলারা চলেন এদেশের কৃষকের, শ্রমিকের, জেলের, মজুরের, ভিক্ষুকের করের টাকায়। সাধারণ মানুষের খেটে খাওয়া ঘাম ঝরানো পয়সায় আমলাদের বেতন হয়। শ্রমিকের মজুরের করের টাকায় বেতন খেয়ে সেই শ্রমিককের কথা ভাববেন না সেটা দেশের জনগণ প্রত্যাশা করেনা। শুধু নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকলেই চলবে না। ৭সেপ্টেম্বর ২০২৩এ দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে আসে, ২৫২জন আমলা পুলিশ বাড়ি বানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রোব ম্যাগাজিনের তথ্যমতে, ৭৪% উচ্চ বিত্তবান, আমলা, পুুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানেরা দেশের বাইরে পড়াশোনা করেন। কিন্তু এই দেশের ভূমিতে বেড়ে ওঠা সন্তানদের তো এদেশেই পড়তে হয়। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র সুখকর নয়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক তালিকায় স্হান পাচ্ছে না। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯টি বিভাগে সেশনজট রয়েছে। সেখানে ৫বছরের কোর্স শেষ হতে কোনো কোনো বিভাগে ৯বছর লেগে গেছে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই এই ভয়াবহ চিত্র রয়েছে।
আমাদের প্রশ্ন ২৬/২৭ বছর ধরে অর্জিত সার্টিফিকেটকে কেনো ৩০বছরের বেড়াজালে আটকিয়ে দেওয়া হবে? এই সহজ জিনিসটি যত দেরীতে বুঝব, দেশ ততো পিছিয়ে পড়বে। দেশে ভাল মানের গবেষক হচ্ছে না। কারণ পড়াশোনা শেষ করেই একজন শিক্ষার্থীরা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সামনে যা দুএক বছর আছে চাকির চেষ্টা করি। এভাবেই আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেখা যাচ্ছে গবেষক হতে হলে কমপক্ষে যে সময় দরকার তার সাথে বাংলাদেশের চাকরির বাজারের কোনো মিল নেই। ফলে গবেষণা শেষ করে এদেশে আর কেউ আসেন না। কারণ তার আবেদনেরই সূযোগই নেই। দেশ থেকে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর সেই মেধাকে নিয়োগ দিচ্ছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। এভাবেই আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
তাই সময় যেমন দাঁড়িয়ে থাকেনা, একটা জিনিস ধরে বসে থাকলেও চলেনা। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫করাটা সময়ের দাবী। আর গবেষকদের ক্ষেত্রে একেবারে উন্মুক্ত করে দেওয়া প্রয়োজন। তবেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে বহুধাপ এগিয়ে যাবে বলে এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে।
লেখক: কানন মোস্তফা, কবি, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক